logo
আপডেট : 29 June, 2018 16:54
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: ঢাকঢোল বেশি, দেনাপাওনা কম
মেইল ডেস্ক

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: ঢাকঢোল বেশি, দেনাপাওনা কম

একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এক পৃথিবীর দুই নায়ক। দূর থেকে অনেক তর্জন-গর্জন-হুঙ্কারের পর অবশেষে একসঙ্গে বসতে রাজি হয়েছে বিশ্বশাসক এই ‘বাঘ আর সিংহ।’

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই শত্রু রাষ্ট্রের এ বৈঠক নিয়ে আগ্রহী সারা বিশ্ব। শুধু জনগণই নয়, এ বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বিশ্বনেতারাও। বৈঠকের আগে ও পরে কী ঘটে তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা। বৈঠকে কী থাকছে কী থাকছে না, ফলাফলইবা কী হবে তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছে বিশ্বগণমাধ্যম।

এই শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ১৬ জুলাই। ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিকে এ বৈঠকের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। মস্কোয় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৃহস্পতিবার এক বৈঠকের পর এর দিনক্ষণ ও স্থানের কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।

অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে বৈঠকের খুঁটিনাটি জানান দেয়া হচ্ছে। ভাব-গরিমা বাড়ানো হচ্ছে। তবে বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের মতে, বৈঠকের আগে যতটা ঢোল পেটানো হচ্ছে, বৈঠকে দেনা-পাওয়ার ফর্দ ততটা লম্বা হবে না।

বৈঠকে শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষ লাভবান হবে না। বিভিন্ন ইস্যুতে দুই পক্ষই হয়তো কিছু প্রতিশ্রুতি দেবেন। চলতি নিয়মে দুই পক্ষের মধ্যে কিছু সমঝোতা স্মারক হবে। কিন্তু বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ওয়াশিংটন ও মস্কো উভয়পক্ষের কর্মকর্তারাও এমনটাই মনে করেন। ট্রাম্প ও পুতিনের শীর্ষ এ বৈঠকের লক্ষ্যে আগেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিন। বৈঠকের পরিবেশ সৃষ্টি ও দিনক্ষণ ঠিক করার জন্য ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এই মুহূর্তে মস্কোয় রয়েছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও এরপর প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বুধবার সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। ক্রেমলিনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, আগামী ১৩ জুলাই যুক্তরাজ্য সফরে যাবেন ট্রাম্প। এ সফরের পরপরই ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে দুই নেতার বহুল কাক্সিক্ষত এ বৈঠক।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৃতীয় কোনো দেশে আয়োজন করা হবে এ বৈঠক। ট্রাম্প বলেছেন, আগামী মাসে ব্রাসেলসে ন্যাটোর বৈঠকের পর পুতিনের সঙ্গে এই বৈঠক হতে পারে। গত বছরের নভেম্বরে এশিয়া প্যাসিফিক সামিটের সময় ভিয়েতনামে শেষবারের জন্য বৈঠক হয় পুতিন ও ট্রাম্পের।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দ্বীপ দখল করে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূতকরণ ও পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সেনা মোতায়েন করে সংঘর্ষ উসকে দেয়া ও সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর মতানৈক্য রয়েছে।

সারা বিশ্বে মস্কো অপতৎপরতা চালাচ্ছে, এ অভিযোগে মাত্র দুই মাস আগে রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। পাল্টাপাল্টি ডজন ডজন কূটনীতিক বহিষ্কার করে দু’পক্ষই। সব মিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মারমুখী হয়ে উঠেছে।

তবে ফিনল্যান্ডের এ বৈঠকে দু’পক্ষই সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশা করছেন। ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এ বৈঠকে নানা বিষয়ে বিশেষ করে সিরিয়া ইস্যু, ইউক্রেন, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রভৃতি বিষয় গুরুত্ব পাবে। ট্রাম্পও বলেছেন, বৈঠকে পুতিনের সঙ্গে সিরিয়া ও ইউক্রেনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন তিনি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত এ বৈঠক থেকে কোনো পক্ষই লাভবান হবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা ড্যানিয়েল ফ্রাইড বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প হয়তো পুতিনের সঙ্গে দরাদরি করবেন।

পুতিনও হয়তো সেগুলোতে প্রতিশ্রুতিও দেবেন। রাশিয়ার এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকের ক্ষেত্রে সতর্ক থাতবে মস্কো। দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়াটাই হবে একটা ইতিবাচক উন্নতি। তবে এর বাইরে কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে পারলে, সেটাই হবে দুই পক্ষের বিজয়।