মালয়েশিয়ায় শনিবার শেষ হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণের সব প্রক্রিয়া। ওই দিন রাত ১২টা পর্যন্ত পুত্রাযায়া ইমিগ্রেশন অফিসে চলবে ফিঙ্গারিংয়ের কার্যক্রম। এ কার্যক্রমে প্রায় সাড়ে সাত লাখ শ্রমিক ও ৮৩ হাজার ৯১৯ নিয়োগদাতা নিবন্ধিত হয়েছেন।
২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হওয়া দীর্ঘ মেয়াদি এ বৈধকরণ প্রকল্পে যে সব অভিবাসী কর্মী ও নিয়োগকর্তারা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের আর সময় দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি ঠেকাতে কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে ইমিগ্রেশন বিভাগ। দেশের নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে কোনো পক্ষের সঙ্গে আপসে যাবে না অভিবাসন বিভাগ। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবৈধদের ধরতে অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে।
দেশটির অভিবাসন বিভাগ রোববার থেকে পর্যবেক্ষণ করবে অবৈধদের স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগের বিষয়টি। এর মধ্যে কেউ গ্রেফতার হলে দেশটির অভিবাসন আইন অনুযায়ী ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/৬৩-এর ধারা ৫৫-বি এর অধীনে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার হাজার রিঙ্গিত জরিমানা বা ১২ মাসের পর্যন্ত জেল অথবা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিপুল সংখ্যক কর্মী বৈধ হওয়ার জন্য কোম্পানি মারফত এবং কোম্পানি ছাড়া বহু (দালাল) এজেন্টের কাছে টাকা পয়সা ও পাসপোর্ট দেয়ার পরেও তারা বৈধ হতে পারেননি। এসব কোম্পানি ও এজেন্ট সনাক্ত করে আইনের আওয়তায় আনতে রোববার থেকেই মাঠে নামবে দেশটির অভিবাসন বিভাগ।
শুক্রবার দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখ ৪৮ হাজার ৮৯২ কর্মী ও ৮৩ হাজার ৯১৯ নিয়োগদাতা বৈধকরণ প্রকল্পে নিবন্ধিত হয়েছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধিতদের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার ৩৩২ জন অবৈধ কর্মীকে বৈধতার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তাদেরকে ৩০ আগস্টের মধ্যে থ্রি প্লাস ওয়ানের আওতায় নিজ নিজ দেশে পাঠাতে নিয়োগকর্তাদের বলে দিয়েছে ইমিগ্রেশন বিভাগ।
এ দিকে সময়সীমা শেষ হওয়ার দুদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে মালয়েশিয়ার সর্বত্র ধরপাকড়। এ ধরপাকড়ে বাংলাদেশিসহ প্রায় চার শতাধিক অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছে।
বৈধকরণ ও ধরপাকড় অভিযানের বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. সায়েদুল ইসলাম জানান, রিহিয়ারিং কর্মসূচিকে সফল করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পাশাপাশি ছুটির দিনেও মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত প্রদেশে দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাদের কর্মীদের সেবা দিয়েছেন।
তিনি জানান, শ্রমিকদের সচেতন করতে প্রচারপত্র বিলি করা হয়। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হয়। কমিউনিটি সভা করে কর্মীদেরকে সচেতন, অবহিতকরণ ও উদ্বুদ্ধ করা হয়। নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভাসমূহে তাদের আওতাধীন সকল অবৈধ কর্মীদের বৈধতা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে সায়েদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ আড়াই বছর মালয়েশিয়া সরকার সময় দিয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে হাই কমিশনার মহ: শহীদুল ইসলামের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবং ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এত দিন সময় বাড়ানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, দূতাবাস থেকে সবসময় বলে দেয়া হয়েছে কেউ যেন তথ্য গোপন না করে। তথ্য গোপন করলেই তার পাসপোর্ট পেতে সমস্যা সৃষ্টি হবে। এছাড়া দালালের শরণাপন্ন না হওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে দূতাবাসের শরণাপন্ন হয় কর্মীরা। তখন আর কিছু করার থাকে না।
সায়েদুল ইসলাম বলেন, অবৈধ যারা আটক হয়েছেন তারা দেশে ফেরত যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।