চীন বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমিতে ফেরার ক্ষেত্রে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে জোর করে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ চীনের সক্রিয় সহায়তা চাইলে এ আশ্বাস দেয়া হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, এদিন বেইজিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংয়ির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে উলিখিত আশ্বাস দেয় চীন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংয়ির আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে এখন চীনে রয়েছেন। আজ সফরের শেষ দিন।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের কাছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থা তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিতাড়িত রোহিঙ্গারা এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত যে, তারা তাদের ফেরার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা চায়। তারা তাদের নিজেদের মূল গ্রামে ফিরে যেতে চায়, কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে নয়। তাদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেয়া আবশ্যক।’
বিবৃতিতে উঠে আসে, এসব স্থানচ্যুত মানুষের দ্রুত প্রত্যাবাসনে রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি ও পুনর্বাসনে মিয়ানমার সরকারকে উৎসাহিত করায় চীনের সক্রিয় সহায়তা চেয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন এবং সেখানে গৃহনির্মাণ এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে সেখানকার পুনর্বাসন পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তার মাধ্যমে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে তার দেশের পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈঠকে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফরকালে স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি আলোচনা করা হয়। মাহমুদ আলী এসব প্রকল্প চূড়ান্তকরণ ও দ্রুত বাস্তবায়নে তার প্রতিপক্ষের সহায়তা কামনা করেন।
বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মতো সহযোগিতার অন্যান্য বিষয় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে এবং জনগণ পর্যায়ে অব্যাহত আলোচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে এবং অঞ্চলের অভিন্ন উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিশানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। চীনা নেতা কিশান বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিতে অবদান রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার ও গভীর করতে তার দেশের অব্যাহত সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দেন।
বৈঠকে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিং করা হয় এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়।
পরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তারা যথাশিগগির সম্ভব মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।