রোহিঙ্গাদের জীবন বিপন্ন করে মিয়ানমার যা করছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সোমবার কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব। আর ব্রিফিংয়ে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান শুধু বাংলাদেশের দায়িত্ব নয়, এ বিষয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ মাসের মাথায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
তারা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গাদের মুখে শোনেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের কথা। এ সময় তাদের কাছে নাগরিকত্বের নিশ্চিয়তা পেলে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা জানান রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা নেতা আমির বলেন, “জাতিসংঘের মহাসচিবকে আমরা বলেছি, নাগরিকত্ব পেলেই স্বেচ্ছায় নিজদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাব। পরে আমাদের কথা শুনে তিনি বলেছেন, সুন্দরভাবে থাকো, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
আরেক রোহিঙ্গা মমতাজ বলেন, “আমরা তাদের কাছে বিচার দিয়েছে। জানিয়েছে-আমরা দেশহীন মানুষ। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক প্রধানদের কাছে কথাই বলেছি আমরা।”
শফি উল্লাহ নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, “হত্যা ও ধষর্ণের বিচার চেয়েছি। আন্তর্জাতিক আদালতে যাতে মিয়ানমারের বিচার করা হোক এটাই একমাত্র দাবি জানিয়েছি তাদের কাছে।”
পরে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ডি-৫ ব্লকে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘‘আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ নির্যাতন হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর। আমরা সবাই আজ রোহিঙ্গা। তাদের জন্য কাজ শেষ হয়ে যায়নি। এই সংকট সমাধানে অবশ্যই সব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার নিশ্চিয়তা দিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে।’’
আর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই বাংলাদেশি নয়, তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি মিয়ানমার সরকারকে বিবেচনা করা উচিত। তাদের অস্বীকার করার সুযোগ নেই মিয়ানমারের। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমারের ওপর চায় প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো তৎপর হতে হবে।’’
এর আগে সকালে উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় সেখানে আশ্রয় নেওয়া নতুন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন সংস্থা দুটির প্রধান। রোহিঙ্গারা তাদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।
পরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের খাবার ও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। প্রায় একঘণ্টা অবস্থান শেষে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে যান গুতেরেস ও ইয়ং কিম। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী তাদের সঙ্গে ছিলেন।