বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মতো দেশ থেকে যাওয়া শত শত দক্ষ পেশাজীবীর ভিসা প্রত্যাখানের বিষয়ে আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
প্রত্যাখাত হওয়া ভিসা আবেদনকারীদের অসদাচরণে দোষী সাব্যস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। প্রথম পর্বের পর্যালোচনা শেষে অভিবাসন আইনের অনুচ্ছেদ ৩২২(৫) অনুযায়ী ৩৮টি আবেদন মঞ্জুরের কথা জানিয়েছে তারা। তবে দক্ষ অভিবাসীদের সংগঠন হাইলি স্কিলড মাইগ্রেন্টস গ্রুপ বলছে আগামী কয়েক সপ্তাহে বাকি থাকা ১৬৭১টি আবেদন পর্যালোচনা শেষ হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। যুক্তরাজ্য সরকার আইন অনুযায়ী ভিসা প্রত্যাখানের দাবি করলেও বিরোধীতাকারীদের দাবি, এই অনুচ্ছেদের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না।
দক্ষ অভিবাসীদের সংগঠন হাইলি স্কিলড মাইগ্রেন্টস গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে অধিকার রক্ষার আন্দোলন করে আসছে। চলতি বছরের প্রথম থেকেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর বাইরে বিক্ষোভ করছে সংগঠনটি। তাদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবীদের প্রবেশাধিকারের বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কি না তা পর্যালোচনা করেছে।
প্রথম পর্বের পর্যালোচনা শেষে ব্রিটিশ অভিবাসনমন্ত্রী ক্যারোলিন নোকস এক চিঠিতে হাউস অব কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটিকে এই বিষয়ে জানান। ওই চিঠিতে তিনি বলেন, ভিসা প্রত্যাখানের বিষয়ে তার দফতরের সিদ্ধান্তটি অভিবাসন আইনের অনুচ্ছেদ ৩২২(৫) অনুযায়ী বৈধ। চিঠিতে তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে প্রত্যাখাত আবেদনের মধ্যে ৩৮টির ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অনুমতি দিয়েছেন। তবে প্রত্যাখাত ভিসার বিষয়ে আবারও আবেদন করা যাবে বলেও জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। নোকস বলেন, ‘আবেদনের সময় আয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানবাধিকারের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে। কারণ এর আগে শুধু আয়ের ব্যাপার বিবেচনা করে ভুল হয়েছিল।’
মঞ্জুর করা ৩৮টি আবেদনের সংখ্যাকে কমিয়ে দেখাতে মন্ত্রীর প্রচেষ্টায় অবাক হয়েছে হাইলি স্কিলড মাইগ্রেন্টস গ্রুপ। গ্রুপটি বলছে, ৩৮টি ক্ষেত্রে আবেদনকারীরা জয়ী হয়েছেন-আগামী কয়েক সপ্তাহে বাকি থাকা ১৬৭১টি আবেদন পর্যালোচনা করা হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
সংস্থাটির সমন্বয়ক অদিতি ভারতওয়াজ বলেন, ‘এটা আমাদের দাবিকেই প্রতিষ্ঠিত করে যে অনুচ্ছেদ ৩২২(৫) সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। মানবাধিকার বিবেচনায় এই আবেদন গ্রহণ করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বৈষম্য দূর হবে এবং স্বরাষ্ট্র দফতরকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে না অভিবাসীদের।’তিনি বলেন, ‘ আবেদন মঞ্জুরের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় যে স্বরাষ্ট্র দফতর ভুল করছিলো। এটার মাধ্যমে বোঝা উচিত মানবাধিকার বিবেচনা করে হলেও আবেদন প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয় বিশেষ করে যেখানে ছোট শিশুরা রয়েছে।’
হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির কাছে লেখা চিঠিতে নোকস নিশ্চিত করেছেন, পর্যালোচনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে বিশেষ প্রতিভাধর ভিসার (টায়ার-১) বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া স্থগিত রাখা হবে। এই সিদ্ধান্তের কারণে বিক্ষোভকারীরা আশা করছেন অনুচ্ছেদ ৩২২(৫) আরও নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এই পর্যন্ত আগের ২৮১টি ভিসা আবেদন পর্যালোচনা করে দেখেছেন। তাতে দেখা গেছে ২৪৯ জন আবেদনকারী তাদের ট্যাক্স রেকর্ডে ১০ হাজারেরও বেশি ইউরোর গরমিল করেছেন। বাকি থাকা অনেক আবেদনের ক্ষেত্রে অন্য কারণ রয়েছে।
গত ২১ জুন হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীরা ট্যাক্স রিটার্নে ভুল করেছেন বলে তাদের আবেদন বাতিল করা হয়নি। বাতিল হওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আবেদনকারীরা তাদের আয় বাড়িয়ে দেখিয়েছেন যাতে করে তারা যুক্তরাজ্যে অনির্দিষ্ট সময় ধরে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পয়েন্ট অর্জন করতে পারেন। অথবা অনেকেই তাদের আয়কর এড়ানোর জন্য তাদের আয় কমিয়ে দেখিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে তাদের চরিত্র ও আচরণ আবেদন মঞ্জুর করার মতো নয়। নোকস বলেন, সামগ্রিকভাবে এসব মামলা ঘাঁটাঘাটি করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে যে অনুচ্ছেদ ৩২২(৫) সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।