রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ সোমবার। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।
তিন সিটির প্রতিটি কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে। ভোট দেয়ার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটগ্রহণে বরিশালে ১০টি, রাজশাহীতে দুইটি ও সিলেটে দুইটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন(ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। ভোটের আগের দুইদিন থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকছে।
আরও জানিয়েছে, প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র পাহারায় ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
এছাড়া বাকি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনও ধরনের অনিয়ম বা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের যেকোনও ধরনের শৈথিল্য বরদাস্ত করা হবে না। গাজীপুরের মতো এই তিন সিটিতেও ভোটগ্রহণ পরিস্থিতির তথ্য তাৎক্ষণিক জানার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সচিব বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে দুই ঘণ্টা পরপর প্রয়োজনীয় সার্বিক তথ্য কমিশন সচিবালয়কে জানাবেন। কোনও কেন্দ্রে জাল ভোট বা সিল মারার ঘটনা ঘটলে বা তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে কোনও অঘটন ঘটলে বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তাৎক্ষণিক কর্মকর্তারা এসএমএসের মাধ্যমে কমিশনকে জানাবেন। এক্ষেত্রে কমিশন ঢাকায় বসে এসব এসএমএসের তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
হেলালুদ্দীন বলেন, ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতি, ভোটার, প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের গতিবিধি এবং সর্বোপরি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনসহ সব কিছু সাধারণ পোশাকে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করবেন ইসির নীরব পর্যবেক্ষকরা।
তিনি বলেন, প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটে কোনও ধরনের অনিয়ম দেখলে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করা এবং প্রয়োজনে তারা কমিশনকেও ঘটনার তথ্য জানাবেন।
ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনের নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণের দুইদিন আগে থেকে তিন সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে র্যাবের একটি টিম এবং প্রতি দুটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে ১৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ৪ প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
আচরণবিধি দেখভাল করতে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৪ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ২৪ দিন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন সিটিতে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। ১০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট এই ২৩ দিন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন সিটিতে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে।
এছাড়া নির্বাচনের দুই দিন আগে থেকে পরদিন পর্যন্ত আচরণ বিধি প্রতিপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতি সিটিতে ২০ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আজ থেকে পরবর্তী চার দিন রাজশাহী ও বরিশালে ১০ জন করে এবং সিলেটে ৯ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন ভোটার আছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। এখানে ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। ১৩৮টি ভোট কেন্দ্র ও ১ হাজার ২৬টি ভোট কক্ষ আছে।
রাজশাহীতে মেয়র পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন(নৌকা), বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল(ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মো. শফিকুল ইসলাম(হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুরাদ মোর্শেদ(হাতি)।
বরিশাল সিটি করপোরেশনে দুই লাখ ৪২ হাজার ৬৬৬ জন ভোটার আছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। এখানে ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। ১২৩টি ভোট কেন্দ্র ও ৭৫০টি ভোট কক্ষ রয়েছে।
বরিশালে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন। প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ(নৌকা), বিএনপির মো. মজিবুর রহমান সরোয়ার(ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র ওবায়দুর রহমান মাহবুব(হাতপাখা), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ(কাস্তে), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের(বাসদ) মনীষা চক্রবর্তী(মই) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন(লাঙ্গল)।
সিলেটে তিন লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার আছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। এখানে ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। ১৩৪টি ভোট কেন্দ্র ও ৯২৬টি ভোট কক্ষ রয়েছে।
সিলেটে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দীন আহম্মদ কামরান(নৌকা), বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী(ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান(হাতপাখা), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের(বাসদ) মো. আবু জাফর(মই) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসান মাহবুব জোবায়ের(টেবিল ঘড়ি), মো. এহসানুল হক তাহের(হরিণ) ও মো. বদরুজ্জামান সেলিম(বাস)।
তিন সিটিতে ৫৩০ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজশাহী সিটিতে সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বরিশালে মুজিবুর রহমান ও সিলেটে মো. আলিমুজ্জামন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।