logo
আপডেট : 30 July, 2018 01:03
চাকরির আগে মাদকসেবী কিনা পরীক্ষা করে নেয়া হবে
ঢাকা অফিস

চাকরির আগে মাদকসেবী কিনা পরীক্ষা করে নেয়া হবে

চাকরিতে প্রবেশের আগে ডোপ টেস্টের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে। এ আইন পাস হলে চাকরিপ্রার্থীদের মাদক সেবনকারী কিনা পরীক্ষা করে নেওয়া হবে। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও মাদক সেবনকারী কিনা পরীক্ষা করা হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আগে সে মাদকাসক্ত কিনা তা পরীক্ষা করে নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

রোববার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এক কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে প্রণীত অ্যাকশন প্লান শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠানে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক নিয়ন্ত্রণে যে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়ন আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এটা জিরো টলারেন্স না আসা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা শুধু অভিযানের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন ধরনের সভা-সমাবেশ সেমিনার এবং মসজিদের ইমামদের মাধ্যমেও প্রচারণা চালাচ্ছি।

ফরিদ উদ্দিন বলেন, মাদক নিয়ে যারা ধরা পড়ছে তারা অধিকাংশই ছোট ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবী। সব সময় সব অভিযান থেকেই মাদক ডিলাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে না। মিয়ানমারের সঙ্গে ও মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার মাদকমুক্ত দেশ গঠনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে মাদক ব্যবসার কৌশল। একদিকে নতুন মাদকের আগ্রাসন অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিদের মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছেন। এখনই সময় যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করা। ইয়াবা নামক মরণ নেশার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন মাদক বিরোধী সর্বাত্মক সামাজিক সচেতনতা ও সকল বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


 
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহাদুজ্জামান খাঁন কামাল কিন্তু বিশেষ কারণে তিনি না আসতে পারায় প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। অ্যাকশন প্লান্ট উপস্থাপন করেন সেবা ও সুরক্ষা বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব আতিকুল হক।

কর্মশালায় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, দেশের জেলাগুলোতে বিশেষ আদালত গঠন করে মাদকের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির আহ্বান জানান।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, এই যে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলে, এক পর্যায়ে গিয়ে কাগজ নাই, সাক্ষী নাই, কিচ্ছু নাই। আর তারপর বলে ইনভেস্টিগেশনের দোষে মামলা খালাস। এই পর্যায়ে আমরা আর যেতে চাই না। তিনি ৬৪ জেলায় ৬৪ টি বিশেষ আদালত গঠনের দাবি জানান।

বেনজির আহমেদ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের দিয়ে প্রতি জেলায় একটি করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ আদালত করা যেতে পারে। বিচারে আসামি খালাস পাক, তারপরেও বিচারটা হোক।


 
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলের মতো এই অভিযানেও সফল হবে সরকার। ৩৭ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতার জেলখানায় ৯০ হাজার বন্দি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বন্দিদের ৪৪ শতাংশই মাদক মামলার। তার মানে জেলখানার ধারণক্ষমতার সমপরিমাণ বন্দি মাদক সংশ্লিষ্টতায়। সময় এসেছে এসব বন্দিদের জন্য বিশেষ কারাগার করার।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, কোনোকিছু শুরু করলে একশ্রেণির মানুষ চিৎকার শুরু করেন। তারা আসলে কী পেতে চান? জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও দেখেছি তারা রাতের পর রাত টেলিভিশনে বসে চিৎকার করছেন। তারা অন্যের সুরে সুর মেলান, পুতুলনাচের মতো অন্যের ইশারায় নাচতে থাকেন। তাদেরকে এটা থেকে বেরিয়ে আসতে বলবো। তারা কী মনে করেন, আমরা কিছু বুঝি না? চিৎকার করে লাভ নেই এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী না হয়ে ঘরে ফিরব না। এটা ১৬ কোটি মানুষের ডিমান্ড, সরকার ও রাষ্ট্রের ডিমান্ড। প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরব।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ৪ মে থেকে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে র‌্যাবের প্রায় ২ হাজার মামলা হয়েছে। আমি অবসরে চলে যাব, তখনও দেখা যাবে এসব মামলার বিচার শেষ হবে না। তাই ৫-৬ বছরের জন্য মাদক মামলার বিচারে প্রতি জেলায় বিশেষ আদালত গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

কক্সবাজারে র‌্যাবের ৭টি ক্যাম্প রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী ইয়াবার চালান কমেছে। কিন্তু বেলুনের মতো আরেকদিকে ফুলে উঠেছে, এখন শুরু হয়েছে সিলেট রুটে। র‌্যাব-পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড সবাই মিলে আমরা ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করব। দেখতে চাই মাদক ব্যবসায়ীরা কোথায় যায়?

সাংবাদিকরা মাদকবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জানিয়ে করে তিনি আরও বলেন, কিন্তু গত ১০ বছরে কক্সবাজার এলাকার কোনো মাদক রিপোর্ট দেখি না। অনেকে বলেন, গডফাদার, গডমাদারের ভয়ে করেন না। তো এখন রিপোর্টার পাঠাচ্ছেন না কেন? আমরা দেখতে চাই, সেই গডফাদার, গডমাদার কারা? এখন অনেকে রিপোর্ট না করে সিএনএনর সাংবাদিক এনে বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লোক এনে বক্তব্য নেন। সাংবাদিকতাকে টিকিট হিসেবে ব্যবহার করে এসব করা ঠিক হবে না, সাংবাদিকতার নৈতিকতার সঙ্গে এসব যায় না বলেও মন্তব্য করেন র‌্যাব ডিজি।

এছাড়াও কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন কোস্টগার্ডের ডিজি আওরঙ্গজেব চৌধুরী, পুলিশের ডিআইজি ব্যারিস্টার মাহবুব হোসেন, বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আনিসুর রহমান, আনসার ভিডিপির উপমহাপরিচালক দ্বীলীপ কে বিশ্বাস, অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবুল বাসেত মজুমদার প্রমুখ। কর্মশালায় সংশ্লিষ্ট ১৬টি মন্ত্রণালয়ের ৫০ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।