logo
আপডেট : 3 August, 2018 12:06
আন্দোলনের ষষ্ঠ দিন
অচল ঢাকা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের প্রভাব ছুটির দিনেও
ঢাকা অফিস

অচল ঢাকা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের প্রভাব ছুটির দিনেও

বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ষষ্ঠ দিনেও রাজধানীতে গণপরিবহনের সঙ্কট।  ঢাকার রাস্তায় দু-একটি বাস ছাড়া কোনো গাড়ি দেখা যায়নি।  রাজধানীর কিছুস্থানে গাড়ি চলাচলে পরিবহন শ্রমিকদেরও বাধা দিতে দেখা গেছে।  এসব কারণে আজ শুক্রবার ছুটির দিনেও বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন।

সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহী বাস নেই বললেই চলে। বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস চলাচল করছে। তবে এ জন্য যাত্রীকে পরিশোধ করতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।  এমনকি রাইড শেয়ারিংয়ে চলাচলকারী মোটর সাইকেলের চালকরাও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, রাইডাররা নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন।

এদিকে, বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ষষ্ঠ দিনে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল করতে দিচ্ছেন না শ্রমিকরা। মিরপুর সাড়ে ১১-তে পরিস্থান পরিবহনের একটি গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় ১০-১২ জনের এক দল শ্রমিক। এ প্রতিবেদককে তারা বলেন, মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে। কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হবে না।

আব্দুল্লাহ নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে।

তবে মিরপুরের ডিসি (ট্রাফিক-পশ্চিম) লিটন কুমার সাহা বলেন, মালিক সমিতি এখনও ধর্মঘট ডাকেনি। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা ডাকতে চাইলে আমরা তাদের না করেছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকরা গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে পারেন।

এদিকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং ঘাতক চালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনের পঞ্চম দিনে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, বগুড়া, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দিনভর বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সড়ক আটকে রাখে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। খুলনায় বিক্ষোভ চলাকালে গাড়ির লাইসেন্স দেখতে চাওয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাইভেট কার তুলে দেয়া হয়। এতে ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআইসহ ৭ শিক্ষার্থী আহত হন।

অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঢাকার রাজপথে তেমন গণপরিবহন দেখা যায়নি। দূরপাল্লার বাসও ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি।

গত কয়েক দিনের মতো বৃহস্পতিবারও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। ফলে এদিনও অচল ছিল ঢাকা।

বিক্ষোভের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা গাড়ির লাইসেন্স যাচাই-বাচাই করে। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকে কাগজপত্র পরীক্ষা করে।

মন্ত্রী, এমপি ও সচিবের গাড়িচালকদের লাইসেন্স না থাকায় তাদের গাড়ি আটকে রাখে আন্দোলনকারীরা। পরে ছেড়ে দেয়া হয়। বিকালের দিকে আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে বেশকিছু যুবককেও লাঠি হাতে শিক্ষার্থীদের পেটাতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, পুলিশের সঙ্গে যে যুবকরা শিক্ষার্থীদের মারধর করে, তারা ছাত্রলীগের কর্মী। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা।

এদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনাও ঘটে। এতে বেশ কয়েক শিক্ষার্থীসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রাস্তায় কোনো গণপরিবহন না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায় নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

ভাংচুরের ভয়ে দূরপাল্লার পরিবহনও চলাচল করতে দেখা যায়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছে, স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা না আসা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় বাস চলাচল কমে যায়। এমনকি আন্তজেলা বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।