logo
আপডেট : 6 August, 2018 01:08
ডলার দিয়ে ফিলিস্তিন কিনতে চান ট্রাম্প
মেইল রিপোর্ট

ডলার দিয়ে ফিলিস্তিন কিনতে চান ট্রাম্প

ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে নিজ ভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান ফিলিস্তিনিরা। এ দাবিকেই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার মনে করেন তারা। স্বনামধন্য ব্রিটিশ সাংবাদিক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক বরার্ট ফিস্ক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডলার দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ভূমির অধিকার কিনে নিতে চান।

শুক্রবার দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে ট্রাম্পের কথিত শতাব্দীর সেরা চুক্তির সমালোচনা করেন ফিস্ক। তিনি বলেন, ওই চুক্তিতে ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের ভূমির অধিকার ছেড়ে ডলারের বন্যায় ভাসার প্রস্তাব দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সংকট নিরসনে এক শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপনের কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই পরিকল্পনা অল্প দিনের মধ্যেই উন্মোচিত হবে বলে জানা গেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাচ্ছে না। ফলে কথিত শতাব্দীর সেরা এই প্রস্তাব নিয়ে অনেকেই সন্দিহান হয়ে উঠেছেন।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে হাঁটছিল আগের মার্কিন প্রশাসন। এই পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৬৭ সালের ৪ জুন ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সীমান্ত আলাদা করা হয়েছিল।

এতে পূর্ব জেরুজালেমকে ধরা হয়েছিল ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী। ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক রীতি ভঙ্গ করে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেন ট্রাম্প। এরপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, মার্কিন মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে কোনো শান্তি আলোচনায় যোগ দেবে না তারা।

ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দেয় ফিলিস্তিন। পাল্টা পদক্ষেপও নেয় যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সংস্থায় পরিকল্পিত সহযোগিতার অর্ধেক তহবিল বাতিল করে।

মে মাসে প্রকাশিত অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী মাসে (জুনে) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বহুল প্রত্যাশিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা উন্মোচন করছে তার প্রশাসন। এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের জন্য পশ্চিম তীর ও গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা কমিয়ে ফিলিস্তিনকে আরও বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।

ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা এখনও উন্মোচিত হয়নি।

ফিস্ক তার নিবন্ধে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ৫৩ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (আনওয়ারা) তাদের কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। গত সপ্তাহেই শুধু গাজা থেকেই ১১৩ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৪৯ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের দেখভাল করা আনওয়ারা এরই মধ্যে চার কোটি ৯০ লাখ ডলারের তহবিল সংকটে ভুগছে। প্রতিষ্ঠানটির ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষক ও অন্য ধরনের কর্মীরা এখন বেকারত্বের শঙ্কায় ভুগছে। ফিস্ক জানিয়েছেন, গাজার ক্লান্ত আর হতদরিদ্র মানুষেরা এখন ক্ষুধার হুমকির মুখে। ৫৩ বছর বয়সী ছয় সন্তানের এক বাবা সম্প্রতি বলেছেন, ৩২ বছর আনওয়ারায় কাজ করার পর বেকার হয়ে গেছেন তিনি।

নিবন্ধে ফিস্ক মনে করিয়ে দিয়েছেন, একমাস আগে জ্যারেড কুশনার মন্তব্য করেন, ‘আমার বিশ্বাস রাজনীতিবিদদের আলোচনায় ফিলিস্তিনি জনগণ কম মূল্য পায়। তারাই এখন দেখবে একটি চুক্তি কিভাবে তাদের বদল ঘটায়।

তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নতুন সুযোগ, আরও বেশি কাজ ও বেশি বেতনের চাকরি এবং একটি সমৃদ্ধ জীবন পাবে।’ তার এই মন্তব্যের আগে ফিস্ক বলেছিলেন, ‘এটা ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে শান্তি নিশ্চিতের পরিবর্তে অর্থের বিনিময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। ডলারের বিনিময়ে ফিলিস্তিনির রাজধানী জেরুজালেম কেড়ে নেয়া। ফিলিস্তিনিদের বহু অধিকার ডলার দিয়ে কিনে নেয়া। সত্যিকার অর্থে এক ট্রাম্পীয় সমাধান।’