ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া আগামী নভেম্বর থেকে দেশটির তেল রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে যাচ্ছে।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় জাতির সঙ্গে ইরান পরমাণু চুক্তির পর এসব নিষেধাজ্ঞার কিছু তুলে নেয়া হয়েছিল। ফলে গত তিন বছরে দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতি অনেকটা বিকশিত হয়েছে।
নতুন করে সেই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের কারণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি আবারও মন্দার কবলে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর প্রতি হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে যারাই ব্যবসা করবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা কোনো ব্যবসা করতে পারবে না। আমি বিশ্বে শান্তি চাই। অন্য কিছু নয়’।
সিএনএন মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রথম ধাপের এ নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের ভঙ্গুর অর্থনীতির ওপর নতুন করে প্রভাব ফেলবে। নিষেধাজ্ঞায় নাগরিকদের মার্কিন ডলার ক্রয়, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু আমদানি-রফতানি, তেল-কয়লা খাত, সফটওয়্যার ও অটোমোবাইল খাত প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার তেহরানের অর্থনৈতিক কাঠামোতে ইতিমধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এপ্রিলের পর থেকে ইরানি মুদ্রা রিয়ালের মূল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্য দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে মূল্যস্ফীতি। ফলে ইতিমধ্যে তেহরানসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে মজুদদারি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে। এসব প্রতিবাদ সমাবেশে সরকারবিরোধী স্লোগানও দেয়া হয়েছে।
বহু আগে থেকেই ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খাড়া ঝুলছে। তা সত্ত্বেও দেশটিকে প্রায়ই ‘মধ্যপ্রাচ্যের জার্মানি’ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। আট কোটি মানুষের দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ ১৭তম বৃহৎ বাজার। জনসংখ্যার বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষিত।
স্বর্ণসহ মূল্যবান বিভিন্ন ধাতুসহ অসংখ্য প্রাকৃতিক সম্পদের আধার এ দেশ। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে মোবাইল ও গাড়ি নির্মাণ শিল্পের মতো বেশ কিছু খাতে বিনিয়োগ করেছে বহু কোম্পানি। ফলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল অর্থনীত। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় দেশটির সেই প্রচেষ্টা অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
নিজের দেশের পাশাপাশি বাজার হিসাবে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর বাজারও ইরানের নিয়ন্ত্রণে। ৩০ কোটিরও বেশি ভোক্তা রয়েছে এই বাজারে। এটা প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার সমান। এসব বাজারে প্রধানত ভারি শিল্পপণ্য রফতানি করে তেহরান।
নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশাল এ বাজার হারাতে পারে দেশটি। কারণ তাদের স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি শিল্পকে টার্গেট করেই নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নিজেদের ব্যবসা গুটানোর ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্সের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পিএসএ। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, তেহরানে সরকার পরিবর্তন চায় ওয়াশিংটন। আর এ লক্ষ্যে সরকার ও জনগণের মধ্যে একটা সংঘাত ও দূরত্ব সৃষ্টিই তাদের টার্গেট।
এই অভিযোগ প্রায়ই অস্বীকার করেন মার্কিন রাজনীতিকরা। ইরানি রিয়ালের দরপতন ইতিমধ্যে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে যুবক ও শিক্ষিত তরুণদের ক্ষেত্রে।
আমদানি পণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি বহু দিন ধরে পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি প্রভৃতি সংকটে জনগণ। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা সেই পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে।