রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-কে কোনও ধরনের সহযোগিতা করবে না মিয়ানমার। গতকাল বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির কার্যালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার কোনও এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নেই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমার এ সংক্রান্ত কোনও সনদে সই করেনি। রোম সনদের ওপর ভিত্তি করে হেগের আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য ব্যক্তির বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে আইসিসির। সই না করার কারণে মিয়ানমার রোম সনদের কোনও পক্ষ না। তাই নেইপিদোর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়ার এখতিয়ার আইসিসির নেই।
মামলা পরিচালনায় আইসিসির এখতিয়ার নিয়ে মিয়ানমারের মতামত জানতে চাওয়ার পর দেশটি সহযোগিতা না করার ঘোষণা দিল।
আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার মিয়ানমারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশ্যে বা গোপনীয়ভাবে তিনটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ জমা দিতে আহ্বান জানিয়েছিল। এর জবাবে মিয়ানমার আইসিসির সাথে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার ‘ন্যায্যতা এবং স্বচ্ছতা' নিয়েও তাদের উদ্বেগ রয়েছে।
দেশটি আরও দাবি করেছে, সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও আইসিসি মিয়ানমারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করলে ভবিষ্যতের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘ জানায় সেখানে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন আদালতের তদন্ত প্রত্যাখ্যান: আইসিসির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও বল:পূর্বক উচ্ছেদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার তদন্ত ও বিচারের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার দেশটি জানায়, এটি একটি ‘নির্বোধ প্রস্তাব এবং অবশ্য পরিত্যাজ্য।’
এর আগে, আইসিসি’র বিচারকেরা রোহিঙ্গা গনহত্যা ও উচ্ছেদের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে ২৭ জুলাই পর্যন্ত দেশটিকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সরকারের বিশেষ উপদেষ্টা অং সান সূচির দপ্তর এমন মন্তব্য করে। এসময় তারা কেন আইসিসি’র অধীনে বিচারকার্য পরিচালনা করা উচিৎ নয়, তার বেশ কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছে। সূচির দপ্তর জানায়, এই সমস্ত কারণেই মিয়ানমার আইসিসি’র প্রস্তাবে সাড়া দেবেনা।
দপ্তরটির আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, রোম ঘোষণার অনুকূলে গঠিত আইসিসিভূক্ত দেশ নয় মিয়ানমার। তারা আইসিসি সনদে স্বাক্ষরকারী দেশও নয়। এমতাবস্থায় মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে তদন্ত এবং বিচারকার্য পরিচালনার কোন অধিকার সংস্থাটির নেই।
এই বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের আরো পরিষ্কার অবস্থান জানার জন্য তাদের সঙ্গে বার্তা সংস্থা রয়টার্স যোগাযোগের চেষ্টা চলিয়ে ব্যর্থ হয়।
এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পর্ষদের এক ঘোষণায় ইতোপূর্বে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মাবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের জন্য কোন দেশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য দেশ হতে হবে। সদস্য দেশগুলোর বাহিরে এমন অপরাধের বিচার পরিচালনার অধিকার নেই আইসিসি’র।
তবে এই বিষয়ে, বাংলাদেশের ব্যাখ্যা ও অবস্থান জানতে চেয়েছেন আইসিসি বিচারক ফাতো বেনসৌদা। বিশেষ করে, মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক অসংখ্য রোহিংগাকে বাংলাদেশে আসরয় নিতে বাধ্য করায় তিনি এই বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ রোম সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আইসিসি’র ন্যায্য বিচার পাবার অধিকার রাখে।
তবে সূচির দপ্তর আরো জানায়, আইসিসি’র এমন তদন্তে সাড়া দেবার কোন যথাযথ বাধ্যবাধকতা নেই মিয়ানমারের। তারা মনে করে, আইসিসি’র পক্ষ থেকে এমন ধরণের তদন্তের চেষ্টা ভবিষ্যতে অন্যান্য অরাস্ট্রিয় শক্তিগুলোর বিচারকে বাধাগ্রস্থ করবে।