সৌদি আরবে পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সে অনুযায়ী আগামী ২০ আগস্ট পবিত্র হজ। শনিবার সৌদি সুপ্রিম কোর্টের এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ১২ আগস্ট রোববার হবে জিলহজ মাসের প্রথম দিন।
হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, বছরের ১২ তম বা শেষ মাস হচ্ছে জিলহজ মাস। এ মাসের ১০ তারিখে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়।
এই জিলহজ মাসেই আল্লাহ তাআলার নির্দেশে নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানির মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম। তার সেই ত্যাগের মহিমাকে স্মরণ করে এই পবিত্র মাসে ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির বিধান রয়েছে।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত তিন দিন ধরে পশু কোরবানি দেওয়া যায়।
‘আহলান সাহলান’ বলে বিদেশীদের স্বাগত জানাচ্ছেন সৌদিরা: এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান পবিত্র হজব্রত পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে সমবেত হচ্ছেন। সৌদি আরবের স্থানীয় লোকেরা বিদেশী মেহমানদের ‘আহলান সাহলান’ বলে স্বাগত জানাচ্ছেন।
হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু না হলেও ইতিমধ্যে অনেকেই পবিত্র কাবা শরিফ তওয়াফ করছেন। কেউ কেউ পালন করছেন ওমরাহ। তওয়াফের জন্যে কাবা শরীফের চারদিকে সাতবার প্রদক্ষিণ করছেন। হাজরে আসওয়াদে চুমু খাচ্ছেন। ভিড়ের কারণে যারা হাজরে আসওয়াদের কাছে যেতে পারছেন না তারা দূরে থেকে হাত উঁচু করে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে হাতেই চুম্বন করছেন। জমজম কূপের পানি পান করছেন।
তারপর সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে প্রদক্ষিণ করছেন। মাথার চুল ছেটে মুণ্ডু করছেন। এভাবে ওমরাহ পালন করে দিনরাত দোয়ায় মশগুল অনেকে। হজ পালনের উদ্দেশ্যে আসা লাখ লাখ মুসলমানের পদচারণায় এখনই মুখরিত মক্কা নগরী।
হজ পালনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এখনও আসছেন। তাদের বেশিরভাগই এহরাম বেঁধেই রওনা দিয়েছেন।
বিমান আকাশে এহরাম জোনে প্রবেশের ২০ মিনিট আগে ঘোষণা দিচ্ছে এহরাম যা দুই টুকরা সাদা কাপড়ে তৈরি পড়ার জন্যে। এহরাম জোনে প্রবেশের পর তালবিয়া তথা ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ পাঠ করার ঘোষণা দিচ্ছে। তখন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তালবিয়া পাঠ করছেন।
মুসলমানরা পবিত্র কাবা শরিফকে আল্লাহর ঘর হিসাবে মানেন। তার চারপাশে প্রদক্ষিণ করে বিভিন্ন ইচ্ছা পূরনের জন্যে দোয়া করছেন। মক্কা নগরী এখন দিনরাত সব সময়েই মানুষের পদভারে মুখরিত। জেদ্দায় বিমান অবতরণের পর সবাই মক্কার দিকে ছুটছেন। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ কাবা শরীফে আদায় করার জন্যে কাবা শরিফে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে কাবা শরিফ লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা কাউকে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছেন না। অগত্য মুসলমানরা কাবা শরীফের বাইরের খালি জায়গায় নামাজের জন্যে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।
মক্কা নগরীতে হোটেলগুলি ইতিমধ্যেই ভরে যাচ্ছে। যারা আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রেখেছেন তারা সেখানে ঠাঁই পাচ্ছেন।
মোয়াল্লেমের মাধ্যমে দল বেঁধে হজ করতে আসা মুসলমানদের অনেকেই আবার আগে থেকেই বাড়ি ভাড়া করে সেখানে উঠছেন। তবে সবার চেষ্টা থাকে কাবা শরীফের আশেপাশের হোটেলে ঠাঁই পাওয়ার জন্যে যাতে সব সময় তারা কাবা শরীফে নামাজ আদায় ও ইবাদত করতে পারেন।
কাবা শরীফের আশেপাশে গড়ে ওঠা সেলুনগুলির এখন ব্যবসার মৌসুম। ওমরাহ পালন শেষে কেউ বের হলে সেলুনের লোকেরা মাথা মুণ্ডুপ করার জন্যে আমন্ত্রণ জানায়।
তওয়াফের মাঝেই কাবা শরিফে কর্মরত কর্মীরা কিছু অংশ ফিতা দিয়ে আটকে দিয়ে ধোয়ামোছার কাজও করছেন।
হজের সময় কিছুটা বাকি থাকায় অনেকে আবার এই সুযোগে মদীনা মনোয়ারায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) রওজা শরিফ জিয়ারত করছেন। আরাফাত ময়দানও তৈরি হচ্ছে। সেখানেই হবে মূল হজ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরাফাত ময়দানেই বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
পৃথিবীতে প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া আরাফাতেই প্রথম মিলিত হন।
ইসলাম ধর্মমতে, পৃথিবীতে মানবজাতির আগমন সেখান থেকেই। আরাফাত ময়দানে লাখো মুসলমান ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির আমি হাজির’ বলে ধ্বনি দেবেন। হজের সময়ে ওই সময়দানে মানুষের সমাগম ঘটবে।
হজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এবারের হজ কভার করার জন্যে অনেক বিদেশী সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়। তাদের জন্যে জেদ্দা, মক্কা ও মদীনায় নির্ধারিত হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে। ওই সব হোটেলে মিডিয়া সেন্টার খোলা হয়েছে।
সৌদি কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে হজ পালনের জন্যেও বিদেশী সাংবাদিকদের জন্যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিদেশী সাংবাদিকদের জেদ্দায় স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতার লক্ষ্যে কাজ করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ইতিমধ্যেই হজ পালন ও হজ কভার করার জন্যে বাংলাদেশ, মরক্কো, মিসর, ব্রুনাই, জিবুতি, কমরোসসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সাংবাদিকরা সৌদি আরবে পৌঁছে গেছেন।