বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কারণে ১৯৭৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৬ বছরে বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত আর্থিক ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৮৯ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি অর্থে ২৮৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতে বাংলাদেশ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হবে বলে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়ন হতো বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, শূন্য গুদামঘর, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত আর কখনো অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত “বঙ্গবন্ধু ‘বেঁচে থাকলে’ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কতদূর যেত?” শীর্ষক সেমিনারে দুই বক্তা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
মূল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.কে. আজাদ চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। সংগঠনটির সহসভাপতি এজেডএম সালেহর সভাপতিত্বে সেমিনার পরিচালনা করেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার পর যারা মনে করত বাংলাদেশ টিকবে না, তারাই এখন বাংলাদেশের উন্নয়নে বিস্ময় প্রকাশ করছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে, অনেক ক্ষেত্রে ভারত থেকেও এগিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন ২৭০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার দুই মাস আগে বলেছেন, আমি অনেক রাজা-উজিরের সাক্ষাৎ পাই। শুধু একজন জাতির পিতার (বঙ্গবন্ধু) সাক্ষাৎ পেয়েছি। তার মতে, বাঙালি বড়ই কৃপণ। শেখ মুজিবকে তার কৃতিত্ব দিতে চায় না।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও কর্মকা-ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন একজন, আন্তর্জাতিকভাবে খুবই সম্মানিত। কিন্তু দেশে তার সম্মান কতটুকু, তা জানি না।
মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্নকেই হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ১৯৯৪-৯৫ সালেই মাথাপিছু জিডিপিতে মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয় দাঁড়াত ৪২ হাজার ৫১৪ কোটি ডলার। ওই সময় মালয়েশিয়ার মোট জাতীয় আয় ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি ডলার।
বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ১৯৭৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতো জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কারণে ১৯৭৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৬ বছরে দেশের অর্থনীতির পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ ৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার বলে হিসাব দেন তিনি।
তবে তার এসব হিসাবের সরাসরি বিরোধিতা না করে ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘আমি একজন হোমিওপ্যাথিক অর্থনীতিবিদ। আপনার বিশ্লেষণ আমার কাছে স্থবির, দুনিয়া কিন্তু গতিশীল।’