বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া এখন খুব কঠিন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আমেরিকায় ডেথ পেনাল্টি প্রচলিত থাকলেও কানাডায় তা নেই। এজন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, কীভাবে খুনিকে ফিরিয়ে আনা যায়।
সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
খুনিদের ফিরিয়ে আনতে কত সময় লাগবে— এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো সময় নির্ধারণ করে দিব না। আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু, এটা খুব কঠিন হয়ে গেছে এখন। তবে আমেরিকার জন্য এতটা নয়, বেশি কঠিন হয়ে গেছে কানাডায় থাকা খুনিকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া। সেজন্য আমরা আলোচনার সঙ্গে আইনগতসহ বেশকিছু পন্থা অবলম্বন করছি। তবে তাদের কাছ থেকে আমরা নেগেটিভ কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তারা আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন। ফলে আমরা দুই দেশ সেদিকেই এগোচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর চার খুনিকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা যদি এসব তথ্য প্রচার করে দেই তাহলে তাদের অবস্থান তারা পরিবর্তন করবে। সেক্ষেত্রে আমরা যে তথ্যের ভিত্তিতে এগোচ্ছি সেই তথ্যের ভিত্তি আর সঠিক থাকবে না। আমি মনে করি, যখন তাদের পরিষ্কারভাবে টিলডডাউন করতে পারব, তখনই আপনারা এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে ভালো হয়। এর বাইরে আমি এখন আর কিছু বলতে চাই না।’
আনিসুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে বাকি যে দু’জনের কথা বলছেন, তাদের মধ্যে একজন আমেরিকায় আছেন। তাকে ফিরিয়ে আনার আলাপ-আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে আদালতের আশ্রয় নিব বলে আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেইভাবে কাজও এগোচ্ছে। বিএনপি সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা যদি পদক্ষেপ নিত তাহলে আমাদের আর এতো বেগ পেতে হতো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করি। ততদিনে রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায় অবস্থানের জন্য আইনগতভাবে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছেন। এজন্য আবারও আমাদের নতুন করে আইনি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, তাকে ফিরিয়ে আনতে আলাপ-আলোচনা যেটা চলছে, সেটা ফলপ্রসূ হবে। তবে এজন্য আমি সময় বেঁধে দিতে পারব না। কারণ, আপনারা জানেন সে দেশে নতুন প্রশাসন এসেছে। তারা তাদের প্রশাসনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে যেভাবে আমরা আলোচনা করে যাচ্ছি, তাতে আমার মনে হয় খুব সম্ভব আমরা একটা অগ্রগতি পেয়ে যাব।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আর খুনি নূর চৌধুরীর বিষয়টা হচ্ছে- কানাডায় একটি আইন আছে, সেটা হলো যদি কোনো দেশে মৃত্যুদণ্ড সাজা কার্যকর করা হয়, তাহলে সে দেশের কোনো আসামিকে তারা ফেরত দেয় না। সেজন্য আমরা একদিকে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি, অন্যদিকে দেশটির সরকারকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, তার অপরাধ কতটা গুরুতর। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও কাজ করছেন। তবে যেহেতু তাদের দেশে একটি আইন আছে সেই আইন বহাল রেখেই তারা কিভাবে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করতে পারে, সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করছি। আর যেহেতু তারা আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন তাই আমরা আশাবাদী তাকে ফেরত পাওয়ার বিষয়ে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সাংবাদিকদের যে জানিয়ে এগিয়ে যাব, তা নয়। কারণ, আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই বিস্তারিত বলতে পারব। এর আগেও হয়তো বলা হয়েছে, বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা। তবে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ফলে আমরা যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব, তখই আমরা জনগণকে বলতে পারব।’