বিশ্বকাপ মানেই যেন আলাদা এক উত্তেজনা। বিশ্বকাপে বিশ্ব কাঁপে। কিছুদিন আগেই কাঁপিয়ে দিয়ে গেল বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের শিরোপা তুলে ধরেছে ফ্রান্স। বিশ্বকাপের এমন কাঁপুনিতে গা ভাসাতে চাইছে টেনিসও। এ বছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টেনিসের বিশ্বকাপ শুরু হতে যাচ্ছে।
কাগজে-কলমে না হলেও টেনিসের বিশ্বকাপ আগে থেকেই ছিল, ডেভিস কাপ। ডেভিস কাপের নিয়মেই বড় পরিবর্তন আসছে। এই নতুন পরিবর্তন আনার পেছনের মূল কারিগর বার্সেলোনার খেলোয়াড় জেরার্ড পিকে। তাঁর মালিকানাধীন কসমস গ্রুপই এ উদ্যোগে অর্থায়ন করছে। ডেভিস কাপ থেকে বেশ ভিন্ন এই নতুন টুর্নামেন্ট। মোট ৭১.৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন টুর্নামেন্ট নিয়ে আশাবাদী আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি ডেভিড হ্যাগার্টি, ‘এই নতুন টুর্নামেন্ট টেনিসের দর্শকদের জন্য বড় একটা বিষয় হবে। এবং এর মাধ্যমে দর্শক, খেলোয়াড়, স্পনসররা আরও বেশি বিনোদিত হবে।’
১৯০০ সালে ডোয়াইট ফিলি ডেভিসের একক প্রচেষ্টায় বর্তমান ডেভিস কাপের জন্ম। প্রথমে টুর্নামেন্টটি ‘আন্তর্জাতিক লন টেনিস চ্যালেঞ্জ’ নামে পরিচিত হলেও তাঁর মৃত্যুর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৫ সাল থেকে একে ডেভিস কাপ নামে ডাকা হয়। একে টেনিসের বিশ্বকাপ নামেই চেনে সবাই। মাত্র দুটি দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এখন এক শ ছাড়িয়েছে। সেই ডেভিস কাপই নতুন করে শুরু হতে যাচ্ছে টেনিস ওয়ার্ল্ড কাপ নাম দিয়ে। টেনিস বিশ্বকাপের প্ল্যান তৈরি করা পিকের মতে, ‘ডেভিস কাপের ভবিষ্যতের জন্য নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক খুশি। এটা টেনিসের সফলভাবে উন্নতি ঘটাবে।’
১১৮ বছর পর পরিবর্তন হওয়া নিয়মে মোট দেশের সংখ্যা হবে ১৮। এই ১৮ দল নির্বাচিত হওয়ার পদ্ধতিটাও একটু অন্য রকম। আগের বছরের চার সেমিফাইনালিস্ট সরাসরি বিশ্বকাপ খেলবে। তার সঙ্গে বাছাইপর্ব থেকে কোয়ালিফাই করা হবে ১২টি দল। সেই সঙ্গে দুটি দল পাবে ওয়াইল্ড কার্ড। ১৮ দলকে ছয় গ্রুপে বিভক্ত করা হবে। ৬ গ্রুপ সেরা ও ২ সেরা রানার্সআপ মিলে হবে কোয়ার্টার ফাইনাল। সেখান থেকে নকআউট ভিত্তিতে নির্বাচিত হবে বিশ্বকাপের সেরা চার দল, যারা নিশ্চিত করবে পরের বছরের বিশ্বকাপ। এক-একটি ম্যাচ হবে তিন সেটের। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে টেনিসের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে।
বাছাইপর্বের মাঝেও আছে নতুনত্ব। আগের বিশ্বকাপ থেকে বাদ যাওয়া ১২ দল (ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া দুই দল বাদে) থাকবে বাছাইপর্বে। আর ১২ দল আসবে র্যাঙ্কিং থেকে। অবাছাই দল বনাম বাছাই দলগুলোর মাঝে খেলা হবে। ২ দিনের খেলার ৪টি সিঙ্গেলস ও ১টি ডাবল ম্যাচ থাকবে। জয়ী দল খেলতে যাবে বিশ্বকাপ।
টেনিসের বিশ্বকাপের পেছনে আগামী ২৫ বছরে ৩ বিলিয়ন ডলার খরচের পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারলে ফুটবল, ক্রিকেট, হকির বিশ্বকাপের মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেতে বেশি সময় লাগবে না টেনিস বিশ্বকাপের। রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদালের মতো নাম যে খেলায় আছে, যে খেলা বিশ্বকাপ ছাড়াই এতটা জনপ্রিয়, সেই খেলায় বিশ্বকাপ আসার পর জনপ্রিয়তা কোথায় যাবে?