জাপানে প্রচণ্ড কাজের চাপে কর্মচারীরা মারা যাচ্ছেন, এমনকি আত্মহত্যাও করছেন। কর্মচারীদের কাজের চাপ থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে জাপান সরকার একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তা কোম্পানিগুলোর জন্য মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়।
এই পরিকল্পনার আওতায় জাপান সরকার চাইছে শ্রমিক-কর্মচারীরা যেন মাসের প্রথম সোমবার সকালে ছুটি উপভোগ করতে পারেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, 'শাইনিং মানডে' নামের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, জাপানি অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন এক প্রস্তাব আনতে যাচ্ছে যেখানে ওভারটাইম কমানো এবং কাজ ও অবসরের মধ্যে ভারসাম্য আনার কথা বলা হয়েছে।
গত বছর সরকার 'প্রিমিয়াম ফ্রাইডে' নামে আরেকটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে যেখানে শুক্রবার বিকেল তিনটার মধ্যে কর্মীদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এটা করা হয়েছে যাতে ওই সময়ে তারা বেড়াতে কিংবা কেনাকাটা করতে পারেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মধ্যে তারা একটি জরিপ চালিয়েছে যেখানে ৩০% কর্মীকে সোমবার সকালে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। জরিপে ইতিবাচক ফল পাওয়ার পর সরকার জাপানের কর্পোরেট জগতের জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করছে। তবে এই প্রস্তাব কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
জাপানে কর্ম-সপ্তাহের মেয়াদ কমানোর প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে চরম উদ্বেগ। দেশটিতে ২০১৬ সালের ১০ হাজার কর্মচারীর ওপর চালানো একটি জরিপে দেখা গেছে ২০% কর্মচারী প্রতিমাসে ৮০ ঘণ্টা ওভারটাইম করেছেন।
১৯৬০-এর দশক থেকেই জানা গেছে যে দীর্ঘ সময় কাজের ফলে হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কে নানা অসুখ হয়। জাপানি ভাষায় এ ধরনের মৃত্যুর নাম 'কারোশি', যার অর্থ অতিরিক্ত পরিশ্রমে মৃত্যু। সরকারিভাবেই কারোশিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১৭ সালে ২৩৬ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে। এর বাইরে 'কারোজিসাৎসু' অর্থাৎ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে কর্মীরা আত্মহত্যা করছেন। ওই একই বছর এধরনের ২৩৬টি আত্মহত্যার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী সাওয়াকো শিরাহাসে বলছেন, এটা জাপানের দীর্ঘ দিনের এক সমস্যা। কর্পোরেট সংস্কৃতি এবং কাজের ধারার সঙ্গে এসব সমস্যার গভীর যোগাযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।