বাংলাদেশ থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে আটক রাখা হচ্ছে। এই দুর্ব্যবহারের ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তজর্জাতিক নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা জোরালো হয়েছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ফেরত যাওয়ার আগে মাঠ পর্যায়ে অবস্থা পরিদর্শন করা উচিত জাতিসংঘের।
এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
এতে বলা হচ্ছে, ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের আটক করে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাদেরকে সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে তাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল। কিন্তু ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন সরকার যে মিথ্যে কথা বলছে তা ফুটিয়ে তোলে। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে জোর গলায় গ্যারান্টি দেয়া সত্ত্বেও যারা এখন পর্যন্ত ফেরত গিয়েছেন তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতি নিধনের শিকার হয়ে ৬ জন রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন।
তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান দিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য তারা রাখাইন যান। কিন্তু তাদেরকে ধরে ফেলে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এরপর তাদের ওপর নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা বিচারের আগেই বন্দিশিবিরে রেখে নির্যাতন করে। তাদের প্রত্রেককে বিচার করে চার বছরের জেল দেয়া হয়। প্রায় এক মাস পর সরকার তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়। একই সঙ্গে আরো কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে মুক্তি দেয়া হয়। সফররত সাংবাদিকদের সামনে ২০১৮ সালের ১লা জুন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে হাজির করে। উদ্দেশ্য, তাদেরকে দেখানো যে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ ভাল আচরণ করছে এবং তাদের ফিরে যাওয়াটা নিরাপদ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে ওই সাক্ষাতের পর ওই ৬ রোহিঙ্গা পালিয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে। তিনজন রোহিঙ্গা পুরুষ ও তিন জন বালকের সাক্ষাতকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট বালকটির বয়স ১৬ বছর। তাদেরকে মংডুর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে আটক রাখা হয়েছিল। তারা বলেছেন, যোদ্ধা গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি’র (আরসা) বিষয়ে তাদেরকে অস্ত্রের মুখে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বিজিপি অফিসাররা।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের ওার নানা রকম অত্যাচার করা হয়েছে। তাদেরকে প্রহার করা হয়েছে লাঠি দিয়ে। রড দিয়ে। শরীর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আরসার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে জোরপূর্বক স্বীকার করাতে দেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক শক। তাছাড়া আটক রাখার সময়ে তাদের পর্যাপ্ত পরিষ্কার পানি ও খাদ্য দেয়া হয় নি। ওই ৬ জনই বলেছেন, তাদেরকে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাদা পোশাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। ঘুষি দিয়েছে। লাথি দিয়েছে। ওই ৬ জনই বলেছেন, তাদেরকে যেখানে আটক রাখা হয়েছিল সেখানকার অবস্থা শোচনীয়। তাদেরকে দেয়া হয় নি কোনো আইনজীবী। বিচার প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে বার্মিজ ভাষায়, যা তারা বোঝেন না বললেই চলে। আদালত তাদের সবাইকে চার বছরের জেল দিলে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নিয়ে যায় মংডু শহরের বুথিডাং জেলখানায়।
২৩ মে মংডু জেলা প্রশাসন থেকে রোহিঙ্গাদের জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাদেরকে দেয়া হবে জাতীয় সনাকক্তকরণ কার্ড (এনভিসি) এবং তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে। এনভিসি হলো এমন একটি পরিচয় বিষয়ক ডকুমেন্ট যা রোহিঙ্গারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ, তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়ার দাবিকে এর মাধ্যমে খর্ব করা হচ্ছে।