২১ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার শীত হিম হিম করা সকাল শুরু হয় আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই। কর্মব্যস্ত সকলে নিজ নিজ কর্মস্থলে ব্যস্ত হতে শুরু করেন। আর তখনই গোটা দেশ গরম হয়ে ওঠে নাটকীয় রাজনৈতিক খবরে।
দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল নেতা হিসেবে যোগ্য নয় বলে দাবি ওঠে। আর সেটা প্রমাণে তাঁকে চ্যালেঞ্জও করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই অযোগ্যতার দাবি তোলেন তাঁর নিজ সভাসদেরই একজন, অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটন।
২১ আগস্ট সকালে টার্নবুলের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন ডাটন। আর সকাল সকালই ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির দলীয় কার্যালয়ে নির্দিষ্ট সদস্যদের দ্বারা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ভোটের ফলাফলে অল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান নি টার্নবুল কিন্তু রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
৪৮-৩৫ ভোটে হেরে গিয়ে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা নিয়েছেন ডাটন। মন্ত্রী স্কট মরিসনকে ডাটনের স্থলাভিষিক্ত করার সুপারিশ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল।
এ ছাড়াও দিনভর ঘটতে থাকে আরও অনেক নাটকীয় ঘটনা। কখনো আরো মন্ত্রীদের পদত্যাগ, কখনো শীঘ্রই আবার প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হবে টার্নবুলকে এ রকম খবরে ছেঁয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধান প্রধানরা ও সংবাদ মাধ্যম।
ডাটনের প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করা, ভোটে হেরে যাওয়া এবং মন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়া সব কিছুই খুব দ্রুত ঘটে যায়। দিনের আলো মাথার ওপরে আসার আগেই দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশ গরম হয়ে উঠে। ঘটনার আকস্মিকতা কাটার আগেই দেশব্যাপী গণমাধ্যমেগুলো ফুলে ফেঁপে ওঠে। দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে সারাদিন নানান রাজনৈতিক সংবাদ প্রচার করে। গতকাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় আলোচনার বিষয় ছিল এই ডাটন ও টার্নবুলের মধ্যকার ঘটনাটি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও একই বিষয় সংক্রান্ত নানা আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ডাটনের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করার পরপরই লিবারেল দলের আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী তাদের পদ থেকে সরে যেতে চান। সবার আগে মাইকেল সুকার তাঁর ইস্তফাপত্র জমা দেন। এরপর একের পর এক ইস্তফা পত্র জমা পড়ে পার্টি অফিসে। ইস্তফা চাওয়া সকলেই পিটার ডাটনের পক্ষ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভোট দেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের পদত্যাগ মঞ্জুর করেছে দলের প্রধান টার্নবুল।
তবে টার্নবুলের জয়ের পেছনে অনেকেই অর্থমন্ত্রী ম্যাথিয়াস কোরম্যানের হাত রয়েছে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক কলামিস্ট ডেভিড ক্রু।
বুধবার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে প্রকাশিত আজ তাঁর এক লেখায় তিনি বলেন, ম্যাথিয়াস এর হাতে টার্নবুলের ভবিষ্যৎ রয়েছে। কেননা, ম্যাথিয়াস দলের এমন একজন নেতা যিনি সবচেয়ে বেশি অন্যান্যদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারেন।
ডেভিড আরও বলেন, গতকাল যদি ডাটন ম্যাথিয়াসের সমর্থন পেত তবে আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী হত পিটার ডাটন। তবে মঙ্গলবারের এ রাজনৈতিক পরিস্থিতে লিবালের দলের টার্নবুলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের কোনো মদদ রয়েছে কি না এ নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে বিশ্লেষকদের মধ্যে।
বিরোধী দলের প্রধান নেতা বিল শর্টেন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলে ভোটারদের মধ্যে সন্দেহ বাড়ে, এ ছাড়া কোনো লাভ হয় না।
তবে এখানো অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতির আকাশ কালো মেঘে ঢাকা, গ্যাঁড়াকলে পড়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। কোনদিক থেকে কি হয় সেদিকে নজর রাখছেন অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।