বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানের নিন্দা জানাতে অস্বীকার করায় দেশটির নেত্রী অং সান সুচিকে দেয়া ফ্রিডম অফ এডিনবার্গ পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।
গত বছর থেকে শান্তি নোবেলজয়ী সুচিকে দেয়া এটি নিয়ে মোট সাতটি পুরস্কার বাতিল করা হয়। এর আগে অক্সফোর্ড, গ্লাসগো ও নিউ ক্যাশলের ফ্রিডম অফ সিটি অ্যাওয়ার্ড বাতিল করা হয়।
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অনবদ্য অবদান রাখায় ২০০৫ সালে তাকে ফ্রিডম অফ এডিনবার্গ পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। দেশটির সামরিক জান্তা তখন তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল।
এডিনবার্গ কর্তৃপক্ষ সে সময় তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। নিপীড়নের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল তাকে।
সুচিকে সে সময় স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গের নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মানিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য তার অক্লান্ত পরিশ্রমকে প্রকাশ্য সমর্থন দেয়া হয়েছিল।
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে বারবার অনুরোধ করা হলেও দেশটির একজন স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
গত বছরের আগস্টের শেষ দিক থেকে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এ সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন চালায়। গ্রামের পর গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে তারা।
জাতিসংঘ যেটাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে আখ্যা দিয়েছে।
গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বন্ধ করতে সুচিকে তার অপরিমেয় নৈতিক সাহস ও প্রভাব খাটাতে আহ্বান জানিয়েছেলেন এডিনবার্গের লর্ড প্রোভেস্ট ফ্রাংক রোস। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে নিজেদের আবাসস্থলে ফিরতে পারেন, সেই সুযোগ দেয়ারও অনুরোধ করা হয়েছিল তাকে।
কিন্তু সুচির কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তাকে দেয়া ফ্রিডম অফ এডিনবার্গ পুরস্কার বাতিল করার সিদ্ধান্ত কাউন্সিলের বৃহস্পতিবারের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকের জন্য রেখে দেন রোস।
গত দুইশ বছরের মধ্যে কাউকে দেয়া এ পুরস্কার বাতিল করার এটা দ্বিতীয় নজির। ১৮৯০ সালে আইরিশ জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবীদ চার্লস স্টিউয়ার্ট পারনেলকে দেয়া এই পুরস্কার বাতিল করা হয়েছিল। কারণ তখন তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছিল।
ফ্রাংক রোসের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উত্তর রাখাইনে চলমান মানবিক সংকট ও বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের বিপর্যয় নিরসনে সুচির কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। কাজেই তাকে ফ্রিডম অফ এডিনবার্গ প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত।
১৮০৮ সালে সর্ব প্রথম এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এর আগে ব্রিটেনের রাণী, প্রিন্স ফিলিপ, স্যার সিয়েন কোনারি, নেলসন ম্যান্ডেলা, স্যার ক্রিস হয় ও অধ্যাপক পিটার হিগসকেও এ পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।