logo
আপডেট : 25 August, 2018 18:39
অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন : ব্যবস্থাপনায় বাড়ছে চ্যালেঞ্জ
সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার

অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন : ব্যবস্থাপনায় বাড়ছে চ্যালেঞ্জ

প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত বলে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বেড়েছে বহু গুণ। নিজ দেশে ফেরার অনিশ্চিয়তায় চরম হতাশায় রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা শিশুদেরও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায়। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাময়িক এই বসতিতে কাটছে উদ্বাস্তু জীবন।

আসমত উল্লাহ নামের এক শিশুর জন্ম দুই মাস আগে উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে। মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা আয়েশা বেগম এখন দিশেহারা। গত এক বছরের উদ্বাস্তু জীবনে তার কাটছে সবচেয়ে কঠিন সময়।

আয়েশা বেগম বলেন, ‘জন্ম নেওয়া বাচ্চাটিকে যেভাবে খাওয়ানো উচিত সেভাবে খাওয়াতে পারছি না এখানে। সেবা-যত্ন কিছুই করতে পারছি না। কোনো আয় রোজগার নেই এখানে।’

রোহিঙ্গা শিবিরে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া আবুল কাশেমের কাটছে অলস জীবন। দেশে ফিরতে যে দেরি হবে, তা বুঝে গেছে সে। তাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দিন কাটছে তার। তার মতো অবস্থা হাজার হাজার দেশছাড়া মানুষের।

আবুল কাশেম বলেন, ‘মিয়ানমারে বিভিন্ন কাজকর্ম করতে পারতাম, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখাতে পারতাম। এ ছাড়া নিজের কাজ নিজে সুন্দর করে চলতে পারতাম। কিন্তু বাংলাদেশে এসেছি এক বছর হচ্ছে, কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না। টাকা-পয়সা নিয়েও সমস্যায় রয়েছি। তাই এখানে ভালো লাগছে না। আমাদের দেশ মিয়ানমারে বেশি খুশি লাগে।’

আনছার উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘মিয়ানমারে নির্যাতন সইতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। যদি মিয়ানমার সরকার আমাদের নাগরিকত্ব মেনে নেয় তাহলে নিজ দেশে ফিরে যাব।’

আবুল কাশেম বলেন, ‘আমাদের দেশে অবশ্যই আমাদের ফিরে যেতে হবে। তবে তার আগে দেশটাকে শান্তিপূর্ণ করে দিতে হবে। যাতে আমরা ফিরে গিয়ে ভালোভাবে বসবাস করতে পারি।’

রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি (মাঝি) ছুরুত আলম বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারণে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি এক বছর হবে। এটা আমাদের দেশ নই। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। তবে এর আগে মিয়ানমার সরকারের আমাদেরকে রোহিঙ্গা বলে মেনে নিতে হবে।’

দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত বিশাল এই জনগোষ্ঠীর থাকা-খাওয়াসহ নানা প্রয়োজন মেটানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয় কমিটি আইএসসিজির মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস জানান, দ্রুত যদি প্রত্যাবাসন না হয় তাহলে রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাবে। কারণ রোহিঙ্গাদের প্রতিবছর ত্রাণ দরকার ৮ হাজার ৩১ কোটি টাকা। যার মধ্যে পাওয়া গেছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ফলে আরো ঘাটতি থাকে প্রায় ৫ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনাও করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। কারণ কবে থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হবে সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারো।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে কাজও চলছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আশ্বাস্ত করেছে, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসবে এবং প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার যা করেছে তা রোহিঙ্গাদের কাছে তুলে ধরবে। ফলে আশা করা যায় দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ১৫ জন করে মোট ৩০ সদস্যের সমন্বয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। এরপর কয়েক দফা বৈঠকের পরও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।