দেশে এখনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
একইসঙ্গে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ করে সব দল ও সমাজের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে।
এসব দাবি আদায়ে নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয় ঘেরাওসহ ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এ জোট।
বুধবার রাজধানীর মুক্তি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোট এসব কথা জানান।
এতে বক্তারা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিতর্কিত ও স্বচ্ছতাহীন ইভিএম পদ্ধতির সংযোজন কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। আরপিওতে আর কোনো অগণতান্ত্রিক সংযুক্তিও গ্রহণ করা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এতে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশে এখনো পর্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ন্যূনতম কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। নিরাপদ ভোটাধিকার প্রয়োগেরও কোনো সুযোগ নেই। তারা বলেন, দেশে আর একটি একতরফা নির্বাচনের কোনো অবকাশ নেই।
লিখিত বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে যত নির্বাচন হয়েছে তার কোনোটি সুষ্ঠু হয়নি। বিতর্কিত ইভিএম ব্যবস্থাসহ আরপিওতে আরও অগণতান্ত্রিক সংশোধনী আনার পাঁয়তারা চলছে।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলতে চাই, আরপিওর অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাতিল করা যেখানে দেশবাসীর দাবি, সেখানে উল্টো আরপিওতে নতুন অগণতান্ত্রিক ধারার সংযুক্তি কোনোভাবেই আমরা বরদাশত করব না। দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল হক বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের পর দেশের মানুষ কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চায় না যে, শেখ হাসিনার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে। যেখানে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে কমিশনে গিয়ে ইভিএম রিজেক্ট করে দিয়েছে সেখানে ইসি সচিব ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এটা গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। সরকারি দলকে বাড়তি সুবিধা দিতেই এটা করেছে ইসি।
আরেক প্রশ্নের সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে এক তরফা নির্বাচন করা অতীতের সরকারের মতো এই সরকারও ১৬ আনা দায়ী। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া এদেশে আর গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কাজেই তোফায়েল আহমেদ কী বলেছেন তা জানি না। তবে তোফায়েল আহমেদকে বলতে চাই, আপনারা তামাশার নির্বাচন বন্ধ করবেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এ নির্বাচন ভালো হয়নি। এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। পরবর্তীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি ভালো নির্বাচন করা হবে। কিন্তু গত ৫ বছরেও সেই নির্বাচন হয়নি। তাই এখনো বলছি, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষর স্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী আগামী ৩০ আগস্ট ৪টায় মুক্তিভবনের মৈত্রী হলে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়। ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে দাবি দিবস পালন করবে।
এছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও বিদ্যমান বির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ ও জেলা পর্যায়ে জেলা নির্বাচন অফিস অভিমুখে বিক্ষোভ হবে।
সীমাহীন দুর্নীতি, দুঃশাসন ও ব্যাংক ডাকাতির লুটপাটের প্রতিবাদে ১১ অক্টোবর সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে জোটের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট দাবি আদায়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসজুড়ে দেশব্যাপী জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।