logo
আপডেট : 11 September, 2018 20:00
ধারাবাহিক প্রতিবেদন: অষ্টম পর্ব
বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় মধ্য আফ্রিকা

বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় মধ্য আফ্রিকা

দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বমঞ্চে এখন সরব পদচারনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে তারা কাজ করছেন। বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছেন গৌরব ও সম্মান। শান্তি ও মানবতা রক্ষায় লাল-সবুজের পতাকাকে তুলে ধরছেন স্ব-মহিমায়। সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কাজী মুহা: আফিফুজ্জামান (কাজী সোহাগ) সেনাবাহিনীর একটি উচ্চ পদস্থ টিমের সঙ্গে গিয়েছিলেন মধ্য আফ্রিকায়। সেখানে সরেজমিনে দেখেছেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের কার্যক্রম। নিউইয়র্ক মেইলের জন্য তিনি লিখেছেন ১০ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ পড়ুন তার অষ্টম পর্ব।

 

শান্তিরক্ষার পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় মধ্য আফ্রিকা। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়তে চান তারা। একইসঙ্গে মধ্য আফ্রিকার উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে বাংলাদেশকে অংশীদার হিসেবে চায় দেশটি।

বিশেষ করে কৃষি বিষয়ক ও অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশ একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেন দেশটির শীর্ষ নেতারা।

মধ্য আফ্রিকায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া গুডউইল টিমের সদস্যদের কাছে এ সহযোগিতা চান দেশটির প্রধানমন্ত্রী সিম্পলাইস সারান্ডজি, স্পিকার জ মাপেঞ্জি, মন্ত্রী, এমপি ও অনান্যরা। তারা বলেন, মধ্য আফ্রিকা বাংলাদেশ থেকে অন্তত ছয়গুন বড় দেশ। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে তারা সবল নন। দেশটিতে অনেক ধরণের সংকট রয়েছে। এ কারণে উন্নতির দিকে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে মধ্য আফ্রিকার প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব স্তরের নেতারা বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপুর্ন অবদান রেখে চলেছে। এজন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

বাংলাদেশের পক্ষ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ধর্ম,বর্ন,গোত্র বাছ বিচার না করে শতভাগ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও একই ধারা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলটি।

মধ্য আফ্রিকা হচ্ছে সেমি প্রেসিডেন্সিয়াল রিপাবলিক। রাষ্ট্রের প্রধান হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি জনগণের ভোটে ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি সরকার প্রধান। দেশটির সংসদে রয়েছে ১৫০ জন এমপি। তারা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কর্মরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সার্বিক কার্যক্রম দেখতে গুডউইল ভিজিটে যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একটি প্রতিনিধি দল। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল এস এম শামিম-উজ-জামান। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহসান ফরিদ, কর্নেল নুরুল হুদা, লে. কর্নেল সিদ্দিকুর রহমান, মেজর মঈদুল হায়দার চৌধুরী, মেজর ইসমাইল কবির, মেজর সাকিবুল হক ও ক্যাপ্টেন খোরশেদ হাসান। ২৭ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত দলটি সেখানে অবস্থান করে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বৈঠক করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।

রাজধানী বাংগুইয়ে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিনিধি দলটি পৌঁছলে তাদেরকে উষœ অভিনন্দন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা কাজ করায় তাদের মধ্যে এক ধরণের বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে জাতিসংঘের কারণে। আমরা চাই,আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুরা একসঙ্গে কাজ করুক।

প্রধানমন্ত্রী সিম্পলিস সারান্ডজি বলেন, শান্তিরক্ষার পাশাপাশি এখানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ এটা করবে বলে আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষে মেজর জেনারের শামিম-উজ-জামান প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, মধ্য আফ্রিকায় বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধীনে কাজ করছে। দেশটিতে যেনো দ্রুত শান্তি ফিরে আসে সে চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল হিসেবে আপনাকে নিশ্চিত করতে চায়, আমাদের দেশের শান্তিরক্ষীরা এখানে অতীতের মতো শতভাগ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। আগামীতেও করবে। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, আশা করি তিনি বাংলাদেশে বেড়াতে যাবেন। এতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উন্নত হবে।

সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শামিম-উজ-জামান বলেন, গত কয়েক দিনে দেশটির বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরেছি। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। এতে মনে হয়েছে,অনেক বিষয়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।  একইদিন প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করে দেশটির যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী সিলভেরে সিম্পলাইস এনগারসো। মন্ত্রী ও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। দুই দেশের মধ্যে খেলাধুলার মাধ্যমে বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক গড়ে তোরার ওপর জোর দেন তিনি। জবাবে মেজর জেনারের শামিম-উজ-জামান বলেন, তারা বাংলাদেশের কাছে কি ধরণের সহযোগিতা চান তা অফিসিয়ালি জানালে বাংলাদেশ সরকার ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রীকে অবগত করতে পারবেন। একইসঙ্গে মন্ত্রী জানান, শিগগিরই এ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়া হবে।

এর আগে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সেনাবাহিনীর গুডউইল টিমের সদস্যরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মধ্য আফ্রিকার সংসদের স্পিকার জ মাপেঞ্জির সঙ্গে। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান মেজর জেনারেল শামিম-উজ-জামান বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিরপেক্ষ। এখানে আমাদের কাছে কোন ধর্ম নেই, বর্ণ নেই। আমরা এসেছি কেবল জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষার কাজে। এসময় তিনি স্পিকারের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আপনারা যারা এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন তাদের প্রত্যেকের সহযোগিতা চায়। জবাবে স্পিকার জানান, শান্তিরক্ষায় কাজে নিয়োজিত বাংলদেশী শান্তিরক্ষীদের এখানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাদের প্রতি আমরা আস্থাশীল। এসময় তিনি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের সর্বাত্বক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশি সেনাবাহিনী যখন থেকে এখানে কাজ করা শুরু করে তখন থেকে এখানে বড় ধরনের কোন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেন,শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর আলাদা ইমেজ তৈরি হয়েছে। প্রতি মুহুর্তে অসীম সাহসিকতা আর অদম্য মনোবল নিয়ে কাজ করায় এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার যাত্রাকে অনেকটা সবল করে তুলেছে। শুধু শান্তি রক্ষা নয় স্থানীয় পর্যায়ে নানা ধরনের সামাজিক কর্মকান্ডেও অবদান রেখে চলেছে বাংলাদেশি সেনাবাহিনী। তিনটি কন্টিনজেন্ট নিয়ে এখানে কাজ করছে বাংলাদেশ। একটি রাজধানী বাংগুইতে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স বা ব্যানএসএফ, বোয়ারে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন বা ব্যানব্যাট আর কাগা-বান্দোরেতে রয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল বা ব্যানমেড।