অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ঋণ ও অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত অনেক দেশ ও দাতা সংস্থা তাদের প্রতিশ্রুত অর্থের পুরোটা দেয়নি। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশি অর্থ দিয়েছে বলে জানান তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদে এ কে এম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তি
আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে বৈদেশিক প্রাপ্ত সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৬১২ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসব অর্থের মধ্যে ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ২৩১ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অনুদান ৩৮০ দশমিক ৭৩ মিলিয়র মার্কিন ডলার।
মন্ত্রী বলেন, প্রাপ্তঋণ ও অনুদানগুলো বৈদেশিক সাহায্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, পানিসম্পদ, শিল্প, বিদ্যুৎ, তৈল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবহন, যোগাযোগ, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ, শিক্ষা ও ধর্ম, স্বাস্থ্য-পুষ্টি জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ, সমাজকল্যাণ-যুব উন্নয়ন ও মহিলাবিষয়ক, জনপ্রশাসন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, গণযোগাযোগ, বিজ্ঞান-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেক্টর ও সাব-সেক্টরে সর্বাধিক ব্যবহার হয়েছে। এ প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নের জন্য ইআরডির মনিটরিং ব্যবস্থা চালু আছে।
তিনি জানান, ঋণ ও অনুদান দেয়া দেশ ও সংস্থাগুলোর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিশ্রুত ৭৮০ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৮৯৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আইডিএ (বিশ্বব্যাংক) প্রতিশ্রুতি ২৯৩০ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ১৪২২ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, চীনের প্রতিশ্রুত ৩৬০৭ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৯৭৮ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ইউএন সংস্থার প্রতিশ্রুতি ১৮৩ দশমিক ০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ১৬৯ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আইডিবির প্রতিশ্রুতি ১১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাপানের প্রতিশ্রুত ১৮২৮ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ১৫৪৪ দশমিক ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ভারতের প্রতিশ্রুত ৪৫০৭ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৪৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাশিয়ার প্রতিশ্রুত সব অর্থ পাওয়া গেছে, দেশটির প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ৮৩২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩০৬টি
মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩০৬টি। এসব কোম্পানির মধ্যে জেড অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির ৪৪টির মধ্যে ৩৭টি আংশিক বা পুরোপুরি উৎপাদনে রয়েছে। তবে, এ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির মধ্যে যারা উৎপাদন কার্যক্রমে নেই সেসব কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের অব্যাহত আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিধিমতে তালিকাচ্যুতিকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাইয়ে রহিমা ফুড লিমিটেড এবং মর্ডান ডাইং অ্যান্ড স্ত্রিন প্রিন্টিং লিমিটেডকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলো বাৎসরিক মুনাফা থেকে লভ্যাংশ বিতরণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের শ্রেণি পরিবর্তন হয়।
মো. সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাধারণভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়লে দারিদ্র্য হ্রাস পায়। তবে, অর্থনীতির কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রবৃদ্ধির সুফল সমানভাবে সবার কাছে পৌঁছায় না। দারিদ্র্য ও অসমতার হ্রাসের ক্ষেত্রে আমরা করকাঠামো সংস্কার, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্রঋণ ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে আয় হস্তান্তর ইত্যাদি কৌশল প্রয়োগ করে আসছি।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ৬৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০০৫ সালে ১৩ শতাংশ পরিবার সুবিধা ভোগ করে এবং পরবর্তী বছরে ২০০৬ সালে তা উন্নীত করা হয়, যার হার ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এই উদ্যোগের ফলে দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০১৬ সালে কমে এসে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অতিদরিদ্রের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।