ঐতিহাসিক অসলো চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হল বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর)। ১৯৯৩ সালে চির বৈরী ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তির পরও কোনো শান্তির দেখা মেলেনি।
প্রতিদিনই ইসরাইলিদের হাতে লাশ হয়ে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। এবার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে যুবক-বৃদ্ধ সবার হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার নতুন ফন্দি এঁটেছে ইসরাইল। ব্যক্তিগতভাবে অস্ত্র রাখার আইন শিথিল করে নতুন আইন পাস করেছে দেশটি।
ফলে ঘরে-বাইরে, অফিস-আদালতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে অস্ত্র রাখতে পারবেন ইসরাইলের নাগরিকরা। নতুন এ আইনবলে আরও ৫ লাখ ইসরাইলি অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন পাচ্ছেন।
ইসরাইলি অস্ত্র আইনে ভয় পাচ্ছে ফিলিস্তিন। ইহুদিদের হাতে হত্যার শিকার হওয়ার হার আরও বেড়ে যাবে বলেই তাদের এ শঙ্কা। খবর আলজাজিরার।
সামান্য কথাকাটাকাটিতেই ইসরাইলিরা গুলি করে ফিলিস্তিনি চাষীদের। এর কোনো বিচার হয় না। এমন অসংখ্য চাষী-দিনমজুরকে হত্যা করেছে ইসরাইলিরা। ইসরাইল সরকারের এ ‘বন্দুকনীতি’ নিয়ে সারাক্ষণই আতঙ্কে থাকেন ফিলিস্তিনিরা। নতুন এ আইনের ফলে সে ভয় আরও বাড়ছে।
পশ্চিম তীরে এক ইসরাইলি নাগরিকের গুলিতে নিজ জমিতেই নিহত হন মোহাম্মদ আহমদ জাল ওদেহ। রাস আল নাখলেহ শহরে গত বছরের নভেম্বরে এ ঘটনা ঘটে।
৪৬ বছর বয়সী আহমদ জাল স্ত্রী ও চার মেয়ে, তিন ছেলে রেখে গেছেন। আলজাজিরাকে তার স্ত্রী মানাল শেখাদেহ আবদেল রাজিক বলেন, ‘যদি আমি সেখানে থাকতাম তাহলে তাকে (ইসরাইলিকে) খুবলে খুবলে খেয়ে ফেলতাম। আমি মনে করি, আমার স্বামীর সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তার কাঁধে গুলি করেছে ওই ইসলাইলি নাগরিক।’
ইসলাইলের নতুন অস্ত্র আইনের কারণে এ ধরনের ফিলিস্তিনি হত্যার ঘটনা হরহামেশাই ঘটতে থাকবে বলে আশঙ্কা করছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
ইসরাইলের জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী গিলাদ এরদান গত ২০ আগস্ট অস্ত্র আইন সংস্কারের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন।
তিনি ঘোষণা করেন যে, নতুন আইনের কারণে দেশটির আরও প্রায় ৫ লাখ নাগরিক বন্দুক ব্যবহারের অনুমোদন পাবে। ইহুদি ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলা রুখে দিতে সাধারণ জনগণকে আরও শক্তিশালী হতেই আইনের রদবদল করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে গিলাদ আরও বলেন, ‘দেশের সচেতন নাগরিকরা লোন-ওলফ (একক দুর্বৃত্ত হামলা) হামলা ঠেকাতে অস্ত্র রাখার অনুমতি পাবেন।’
নতুন আইনে বলা হয়েছে, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও বিশেষ অনুমতি ছাড়াই এখন অস্ত্র রাখতে পারবেন ইসরাইলিরা। অবসরপ্রাপ্ত সেনা, পুলিশ সদস্যরাও বাড়িতে অস্ত্র রাখতে পারবেন।
তাদেরকে আর অস্ত্র ফেরত দেয়া লাগবে না। ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় তারা সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। ১৮ বছর বয়স হলে ইসরাইলে বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিং নিতে হয়। অর্থাৎ ১৮ বছর থেকে তদূর্ধ্ব যে কেউ সামরিক ট্রেনিং নিলেই অস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন।
স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) তথ্যমতে, পশ্চিম তীরে ১ লাখ ৪৫ হাজার ইসরাইলি ব্যক্তিগত অস্ত্র রাখেন। আইনের শিথিলতার কারণে এখন আরও ২ লাখ ইসরাইলি অস্ত্র রাখার সুযোগ পাবেন।
ফিলিস্তিনিদের ভয়ের কারণ হচ্ছে, গত ১০ বছরে ইসরাইলি বাসিন্দাদের দ্বারা ২৯ জন ফিলিস্তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সরাসরি গুলি করেই তাদের হত্যা করা হয়েছে।