logo
আপডেট : 17 September, 2018 01:27
সম্পদের দেশ হয়েও সম্পদহীন তারা

সম্পদের দেশ হয়েও সম্পদহীন তারা

খ্রিস্টান অ্যান্টি-বালাকা গোষ্ঠীর সদস্যরা। ফাইল ছবি

।। কাজী মুহা: আফিফুজ্জামান ।।

ঘর-বাড়ি ভাঙ্গাচোরা। রাস্তাঘাটের অবস্থা করুণ। মানুষগুলো জীর্ন-শীর্ন স্বাস্থ্যের অধিকারি। চোখে-মুখে অভাবের স্পষ্ট ছাপ। বিশ্বের তৃতীয় দারিদ্রতম দেশ মধ্য আফ্রিকার চিত্র এটা। অথচ এরাই হতে পারতো বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অন্যতম। কারন তাদের দেশের মাটির নিচে রয়েছে স্বর্ণ, হীরা, তেল আর ইউরেনিয়ামের মতো পৃথিবীখ্যাত মূল্যবান সব সম্পদ।

নিজেদের হানাহানির কারনে সেই সম্পদ তাদের ভাগ্যবদলে কাজে লাগছে না। নিজেদের অভ্যন্তরীন সংঘাতে রক্ত ঝরছে নিয়মিত। এখানকার মানুষের হাতে হাতে অস্ত্র। অসংখ্য সশস্ত্র গ্রুপ পরষ্পরের সঙ্গে হানাহানিতে লিপ্ত। বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় পাঁচগুন বড় সেন্ট্রাল আফ্রিকায় মানুষ মাত্র ৪৭ লাখ। এই অল্প সংখ্যক মানুষের দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা জাতিগত সংঘাতে বিপজ্জনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্বের দ্বিতীয় অশান্তিময় দেশ হচ্ছে এই সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক।

দেশটির বিশাল একটি অংশ পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে যোজন-যোজন দূরত্বে। তাই নানা ধরনের কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাসে ভর করে চলে তাদের দৈনন্দিন জীবন-যাপন। একটা উদাহরনে বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হবে। দেশটির ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কোন জায়গায় যদি মালবাহি কোন ট্রাক বা লরি নষ্ট হয় তাহলে সেটাকে তারা মনে করে সৃষ্টিকর্তার উপহার। তাদের যুক্তি, এটা যে কোন জায়গায় নষ্ট হয়ে যেতে পারতো। যেহেতু এখানে নষ্ট হয়েছে, তাই এটা আমাদের জন্য উপহার। তাই সবাই মিলে নেমে পড়ে লুটপাটে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা বাস্তব। কারন নষ্ট যানবাহন উদ্ধারের মতো কোন যন্ত্র বা গাড়ি দেশটির নেই। ছোটখাট কোন সমস্যা হলেও গাড়ির পাশে তাবু টানিয়ে বসে থাকতে হয় অন্তত তিন দিন। কারণ প্রতিবেশি দেশ ক্যামেরুন থেকে মিস্ত্রি এনে সেটা সারিয়ে তোলার চেষ্টা হয়। মজার বিষয়, কোন গাড়ি যদি মিস্ত্রি মেরামতে ব্যর্থ হয় তাহলে তা রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

রাজধানী বাংগুই থেকে ১৫০ কিলোমিটর দূরত্বে অবস্থিত বোসামতেলে যাওয়ার পথে এরকম অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি গাড়ির দেখা মেলে। এখানে গাড়ির লোহা-লক্কড়ও কেউ নেয় না। কারণ লোহা কেনা-বেচার কোন ব্যবসা নেই। কোন ধরণের শিল্প কলকারখানা না থাকায় এসবের চাহিদা নেই বলে জানান স্থানীয়রা। নিজেদের মধ্যে মারামারি আর নাচ-গান প্রিয় মানুষগুলো। প্রায় সময় গোলাগুলি আর সাংস্কৃতিক আসরে মেতে থাকে।

স্থানীয় কয়েক জন জানান, একটা গরুর পা ভাঙ্গা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনার উদাহরন রয়েছে দেশটির। আবার একটু উপলক্ষ পেলেই ঢোল, তবলা আর সাউন্ডবক্স নিয়ে মেতে ওঠে নাচ-গানে। প্রবাদবাক্য আছে-মধ্য আফ্রিকানদের হাতে থাকে অস্ত্র, পেটে ক্ষুধা আর কোমরে থাকে নাচ। দেশটির প্রধান খাদ্য হচ্ছে কাসাবা নামের আলু। মাটির নিচে হওয়া বড়সড় আকারের আলুকে নানা উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে আটার মতো বানানো হয়। মজার বিষয়, ওই আটা তারা যখন রোদে শুকাতে দেন সেখানে নিচে কোন কিছু ব্যবহার করেন না। মাটির রাস্তার ওপরই তা মেলে রাখেন। পরে ঝাটা দিয়ে ঝাড়ু দিয়ে তুলে নেন পাত্রে। নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রক্রিয়াজাত করায় নিজেদের বাইরে ওই আটা বাইরের কেউ কেনেন না। দেশটিতে কাজ করা ২১টি দেশের শান্তিরক্ষীরা শাক-সবজি ছাড়া আর কোনকিছু স্থানীয় বাজার থেকে কেনেন না। জাতিসংঘের তত্ত্ববধানে সরবরাহ করা খাবার কেবল তারা গ্রহণ করেন।

মধ্য আফ্রিকায় কাজ করা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮ সদস্যর উচ্চপদস্থ একটি প্রতিনিধি দল ২৭ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত  দেশটিতে অবস্থান করে। এ সময়ের মধ্যে তারা শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত বাংলাদেশের তিনটি কন্টিনজেন্ট বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন (ব্যানব্যাট), বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স (ব্যানএসএফ) ও বাংলাদেশ মেডিকেল (ব্যানমেড) পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি দুটি ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল এস এম শামিম-উজ-জামান। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহসান ফরিদ, কর্ণেল নুরুল হুদা, লে. কর্ণেল সিদ্দিকুর রহমান, মেজর মঈদুল হায়দার চৌধুরী, মেজর ইসমাইল কবির, মেজর সাকিবুল হক ও ক্যাপ্টেন খোরশেদ হাসান।

মধ্য আফ্রিকার বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে আতংক ছড়িয়ে অবস্থান করছে এন্টি বালাকা ও এক্স সেলেকা। দেশটির বোফারগিলা, বোসানগোয়া, বোগাংগোনো, বেরবেরাতি ও এমবাইগি জুড়ে রয়েছে এন্টি বালাকার একছত্র আধিপত্য। অন্যদিকে বোয়ার, এনগারবো, এনজেনে, বিরাও, ব্রিয়া ও বাম্বারাতে রয়েছে এক্স সেলেকা। সম্প্রতি বাম্বারাতে এক্স সেলেকার ২৫০ জনের মতো সদস্যকে হত্যা করে আধিপত্য নিয়েছে এন্টি বালাকা। অন্যদিকে বাংগামু ও ব্রিয়াতে রয়েছে অপর সন্ত্রসী সংগঠন এলআরএ। গত ৩০ বছর ধরে জাতিসংঘ এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছে। কিন্তু শিক্ষার আলোহীন এই মানুষগুলোর কোন পরিবর্তন আসেনি। মুসলমান ও খ্রীস্টানদের মধ্যে হানাহানি নৈমিত্তিক ব্যাপার। দেশটিতে খ্রিস্টানরা সংখ্যালঘু হলেও ২০১৩ সালে সেলেকা নামে মুসলিম বিদ্রোহীদের কয়েকটি গ্রুপ ক্ষমতা দখল করে। ফলে ফ্রান্সের কাছ থেকে ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে যে অস্থিরতা চলছিল তা রূপ নেয় সংঘাতে। আন্তর্জাতিক চাপে ২০১৪ সালে সেলেকা একটি অন্তবর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও মাসের পর মাস সংঘাত চলতেই থাকে।

শান্তিরক্ষার পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় মধ্য আফ্রিকা। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়তে চান তারা। একইসঙ্গে মধ্য আফ্রিকার উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে বাংলাদেশকে অংশীদার হিসেবে চায় দেশটি। বিশেষ করে কৃষি বিষয়ক ও অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশ একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেন দেশটির শীর্ষ নেতারা। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া গুডউইল টিমের সদস্যদের কাছে এ সহযোগিতা চান দেশটির প্রধানমন্ত্রী সিম্পলাইস সারান্ডজি, স্পিকার জ মাপেঞ্জি, মন্ত্রী, এমপি ও অনান্যরা।

মধ্য আফ্রিকার প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব স্তরের নেতারা বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।  তারা বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপুর্ন অবদান রেখে চলেছে। এজন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বাছবিচার না করে শতভাগ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও একই ধারা অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিনিধি দলটি। মধ্য আফ্রিকা হচ্ছে সেমি প্রেসিডেন্সিয়াল রিপাবলিক। রাষ্ট্রের প্রধান হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি জনগণের ভোটে ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি সরকার প্রধান। দেশটির সংসদে রয়েছে ১৫০ জন এমপি। তারা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

দেশটির দূর্গম অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আধূনিক মারণাস্ত্র নিয়ে  সক্রিয় রয়েছে প্রায় ১০টি দূর্ধর্ষ বাহিনী। সংখ্যায় তারা প্রায় ৯ হাজার। এদের মধ্যে এন্টি বালাকা আর এক্স সেলেকা সবচেয়ে বেশি দূর্ধর্ষ। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে রয়েছে-এম-১৬,আরপিজি,এইচএমজি ও রাশিয়ার তৈরি কালাশনিকভ এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র। প্রতিনিয়ত এদের সঙ্গে লড়েই মধ্য আফ্রিকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীরা।

বিশ্বের ২১টি দেশের ২৭টি কন্টিনজেন্ট কাজ করছে মধ্য আফ্রিকায়। মাত্র ৩টি কন্টিনজেন্ট নিয়ে শান্তি রক্ষায় কাজ করছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রাজধানী বাংগুইতে অবস্থিত বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স আলাদা মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৫০ সদস্যের এ কন্টিনজেন্ট স্থানীয়দের কাছে ব্যানএসএফ নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ব্যানএসএফকে দেয়া হচ্ছে আলাদা ধরনের গুরুত্ব ও মর্যাদা। এর অন্যতম কারন এ পর্যন্ত এন্টি বালাকা ও এক্স সেলেকার বিরুদ্ধে ব্যানএসএফ যে কয়টি অপারেশন পরিচালনা করেছে তার সবগুলো সফল হয়েছে। এজন্য মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘের কোন ডেলিগেশন টিম আসলে তাদের নিরাপত্তা দিতে হয় ব্যানএসএফকে। মজার বিষয়,দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গেলে তাদেরও নিরাপত্তা দিতে হয় বাংলাদেশী অকুতোভয় সেনাসদস্যদের।

অনদিকে মধ্য আফ্রিকায় বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে সমুন্নত রাখছে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ান। ব্যানব্যাট নামে এটা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ৩টি কন্টিনজেন্টের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ৮০৬ সদস্যর এ ব্যাটালিয়নে বিভিন্ন স্তরের অফিসার রয়েছেন ৬৫ জন। আফ্রিকার বিস্তীর্ন দূর্গম অঞ্চল জুড়ে কাজ করছে ব্যানব্যাট। নিজেদের ৫টি ক্যাম্প থেকে তারা একের পর এক সন্ত্রীসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। ক্যাম্পগুলো আছে-বেলেকো,বোকারাঙ্গা,বোসামতেলে,বোসামবেলে আর হেডকোয়ার্টার বোয়ারে। জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ি প্রথমদিকে ক্যামেরুনের সীমান্ত এলাকা বেলেকো থেকে মধ্য আফ্রিকার রাজধানী বাংগুই পর্যন্ত ৬১০ কিলোমিটার সড়কের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরইপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে ৭৫০ সদস্য নিয়ে শুরু হয় এই ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম। এরপর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকষ সদস্যরা তাদের কাজের মাধ্যমে ব্যপক সুনাম অর্জন করেন। এতে আস্থা বাড়ে জাতিসংঘেরও। এ কারনে গত বছর থেকে এ ব্যাটালিয়নের ওপর বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে দেয়া হয় স্থানীয় মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। ৬ হাজার স্কয়ার কিলোমিটার থেকে এক লাফে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ হাজার স্কয়ার কিলোমিটার এলাকা। কাজের পরিধি বাড়ে ক্যামেরুন ও চাদ সীমান্ত পর্যন্ত। জাতিসংঘের এই আস্থার মর্যাদা দিতে প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা। ব্যানব্যাটে কাজ করছেন এমন কয়েক সেনা কর্মকর্তা মানবজমিনেক বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত 'সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক'-এর লাইফ লাইন রক্ষায় কাজ করছেন তারা। দেশটির একমাত্র মহাসড়ক দিয়ে সপ্তাহের ছয়দিন খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে নির্বিঘœ নিরাপত্তা দেয়। তা নাহলে না খেয়েই মরতে হতো অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষকে। এই ব্যবস্থাকে জাতিসংঘের পরিভাষায় বলা হচ্ছে, মেইন সাপ্লাই রুট বা এমএসআর। দেশটির রাজধানী বাংগুইসহ সারাদেশের মানুষের খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আসে কামেরুন বর্ডার দিয়ে। ল্যান্ডলকড(কোন সমুদ্র বন্দর নেই) কান্ট্রি হিসাবে পার্শ্ববর্তী অন্য কোন দেশ থেকে কোন পণ্যসামগ্রী আনার সুযোগ নেই তাদের।

এদিকে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের ১২টি ইউনিটের সদস্যরা অসুস্থ হলেই ছুটে আসেন বাংলাদেশ মেডিকেল লেভেল-টু হাসপাতালে। দূর্গম অঞ্চলে কষ্ট স্বীকার করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। মধ্য আফ্রিকার কেন্দ্র কাগা-বান্দোরো নামক স্থানে অবস্থিত মেডিকেলটি ব্যানমেড নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ৬৯ জন জনবল নিয়ে ২০ বেডের এ হাসপাতালটি পরিচালনা করা হচ্ছে। শান্তিরক্ষী মিশনে থাকা ব্যক্তিদের পাশাপাশি এ হাসপাতালের মাধ্যমে নানা বেসামরিক,স্থানীয় ও এ এলাকায় কাজ করা বিভিন্ন এনজিও কর্মীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। হাসপাতালের দরজা সব সময় সবার জন্য খোলা থাকে। অসুস্থ হয়ে কেউ হাসপাতালে আসলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয় না। এখানে মানবতার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি। মধ্য আফ্রিকার সেন্টারে অবস্থিত সব দেশের শান্তিরক্ষীরা এখানে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য দেশ হচ্ছে- মৌরতানিয়া, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, নাইজার ও পাকিস্তানের চারটি কন্টিনজেন্ট। সবমিলিয়ে এখানকার ২১৬০ জন শান্তিরক্ষীর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সেবা দিতে গিয়ে প্রতিমূহুর্তে তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বৈরি আবহাওয়া, ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট, প্রত্যন্ত ও দূর্গম অঞ্চল এবং টানা ছয় মাস বৃষ্টি। এর উপর রয়েছে নিরাপত্তার শংকা। প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্পের বাইরে গোলাগুলি চলে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ এখানে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।

বাংলাদেশের সুনাম অর্জনকারি এ হাসপাতালটিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কন্টিনজেন্ট কমান্ডার (সিসি) কর্ণেল আমিনা হাসনাত চৌধুরী। মধ্য আফ্রিকায় বাংলাদেশের প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার তিনি। এর আগে ২০১৬ সালে আইভরিকোস্টে প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কর্ণেল নাজমা বেগম।

মূলত দুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে মধ্য আফ্রিকার মতো দূর্গম অঞ্চলে প্রতিকুল পরিবেশে কাজ করছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। একটি হচ্ছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাত থেকে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা,অপরটি প্রতিবেশি দেশ ক্যামরুন থেকে দেশটির জন্য আসা রসদের নিরাপত্তা দেয়া। পেশাগত দক্ষতা আর কাজের প্রতি একাগ্রতা বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদের অবস্থানকে এখানে সুসংহত করেছে। তাদের দূর্দান্ত সাহসী ভূমিকা আর অবিশ্বাস্য সব ত্যাগ দিয়ে লাল-সবুজের পতাকাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন গৌরবময় জাতি হিসেবে।

 

 

লেখক: সাংবাদিক।