বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জঙ্গি পরিস্থিতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
‘ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম’ এর এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে তিনটি জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছিল তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার তুলনায় গত বছর জঙ্গি হামলার পরিমাণ ছিল কম। কিন্তু এখনও আইএস এবং আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের (একিউআইএস) মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর ঝুঁকিমুক্ত নয় বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মার্চে বাংলাদেশে তিনটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বেশ কয়েকটি হামলার চেষ্টা নস্যাৎ করে দেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে এবং দেশের ভেতরে কোনো জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দিচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪০টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। একিউআইএস এবং আইএস এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এজন্য আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা নাকচ করে এসব ঘটনায় দেশিয় জঙ্গিগোষ্ঠীদের দায়ী করছে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ছড়ানোর ধরণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের জঙ্গিবাদী আদর্শ প্রচারে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে এবং অনুসারী তৈরি করে। এমনকি আইএস ও একিউআইএস এর বিভিন্ন প্রকাশনায়, ভিডিওতে এবং ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি জঙ্গিদের তুলে ধরতে দেখা যায়।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরা হয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রতিবেদনে।
সেখানে জানানো হয়, সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সন্ত্রাস বিরোধী আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। ২০০৯ সালে প্রণীত ওই আইনে ২০১২ এবং ২০১৩ সালে সংশোধনীও আনা হয়েছে।
তবে আইনের একটি দুর্বলতা উঠে এসেছে মার্কিন প্রতিবেদনটিতে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জঙ্গি সদস্য সংগ্রহকে বেআইনি বলা হয়নি।
প্রতিবেদনে বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা রোধে বাংলাদেশে সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, সুনির্দিষ্টভাবে বিদেশি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনের অভাব আছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রচলিত আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এনে বিদেশি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের চেষ্টা করতে হয়।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমাধান পদ্ধতি অনুসরণ করার তাগিদ দেয়া হয়।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কথা উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।
একইসঙ্গে জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে নেতিবাচক আলোচনাও আছে মার্কিন প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাগুলোর জঙ্গি বিরোধী অভিযানগুলোতে অনেক সন্দেহভাজনের মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ সময় এসব মৃত্যুকে ‘ক্রসফায়ার’ বলা হয়েছে। এমনকি কিছু অভিযানকে সাজানো বলেও মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
তবে প্রযুক্তিগত ও আইনগত পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের অব্যাহত চেষ্টার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বন্ধ এবং সমন্বিত চেষ্টার কথাও উঠে এসেছে এখানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পুলিশ-প্রশাসন ইমাম ও আলেমদের নিয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে, বুঝিয়ে বলা হচ্ছে, ‘কোরআন জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না।’