দুই কোরিয়ার দীর্ঘ ৭০ বছরের শত্রুতা ভুলে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ফের এক দেশ হয়ে যাওয়া উচিত। এমনটিই চাইলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন।
এক দশকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার জনগণের সামনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় পিয়ংইয়ংয়ে মে ডে স্টেডিয়ামে সাত মিনিটের ভাষণটি দেন মুন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন গত মঙ্গলবার পিয়ংইয়ং সফরে যান। তাকে আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাগত জানান উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। দুই নেতা বুধবার উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ এবং কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনে বসেন। এতে উন জানিয়েছেন, তার দেশের অন্যতম বড় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র বন্ধে তিনি রাজি আছেন। এ ছাড়া কোরীয় উপদ্বীপকে ‘পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত’ করতেও তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিন দিনের পিয়ংইয়ং সফরে মুন উত্তরের নেতা কিম জং উনের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছেন।
পরে বিকেলে মুনের সম্মানে পিয়ংইয়ংয়ের মে ডে স্টেডিয়ামে বিশাল ক্রীড়া প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। স্টেডিয়ামে দুই নেতার প্রবেশের সময় দেড় লাখ উত্তর কোরীয় নাগরিক দাঁড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানায়।
মনোমুগ্ধকর ছন্দোবদ্ধ নৃত্য ও শারীরিক কসরতের মাধ্যমে এ আয়োজনে হাজার হাজার উত্তর কোরীয় তাদের ৭০ বছরের ইতিহাস ও উপকথা তুলে ধরে। এ অনুষ্ঠান শুরুর আগে সাত মিনিটের জন্য ভাষণ দেন মুন। ভাষণে তিনি বলেন, আমি প্রস্তাব করছি, আমাদের উচিত গত ৭০ বছরের শত্রুতা সম্পূর্ণ শেষ করা এবং ফের এক হওয়ার জন্য বড় ধরনের শান্তির পদক্ষেপ নেওয়া। দক্ষিণের প্রেসিডেন্টের পিয়ংইয়ং সফরকে স্মরণীয় করে রাখতে মুন ও কিম চীন সীমান্তের কাছে মাউন্ট পিকতু ভ্রমণ করেন।
সফর শেষে বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন প্রেসিডেন্ট মুন। এরপর সিউলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আরও একটি বৈঠকের আগ্রহ দেখিয়েছেন কিম। এজন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও খুব শিগগিরই পিয়ংইয়ং সফর করবেন।
এদিকে উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণের জন্য ‘২০২১ সাল’কে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের পিয়ংইয়ং সফরের শেষ দিনে এ কথা জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ঘটাতে হবে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন।
চলতি চছরের জুনে সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক হয়। বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে চুক্তির পরও উভয় পক্ষের মধ্যে চলা আলোচনা বেশ কিছুদিনের জন্য থমকে গিয়েছিল।
এ নিয়ে পিয়ংইয়ংয়ে পম্পেওর নির্ধারিত একটি সফর শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প।