logo
আপডেট : 30 September, 2018 14:42
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বিচারপতি সিনহা
বিশেষ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বিচারপতি সিনহা

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন এসকে সিনহা। ছবি: নিউইয়র্ক মেইল

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। ওয়াশিংটন ডিসিতে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসির’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানেই তিনি এ কথা জানান। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম উপস্থিত ছিলেন। 

সিনহা বলেন, এ দেশে বর্তমানে আমার কোনো স্ট্যাটাস নেই। আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখানে আমি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছি। কিন্তু এখনও এর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিনহা দাবি করেন, তিনি লন্ডনের হাউস অব কমনস, জেনেভা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্য কোথাও পারছেন না।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেবার পর বিচারপতি সিনহা গত এপ্রিল মাসে ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। ১৯ মে নিউইয়র্ক এসাইলাম অফিসে তার সাক্ষাতকার নেয়া হয়। একই দিনে সেখানে সাক্ষাতকার দিতে যাওয়া অন্যান্য বাংলাদেশী এসাইলাম আবেদনকারীরা তাকে সেখানে দেখেছেন।  

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে রাজনৈতিক তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এর এক বছরের মাথায় তিনি বিদেশে বসে ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে বইটি লিখেছেন, যা নিয়ে বাংলাদেশের মতো প্রবাসে বাংলাদেশিদের মধ্যেও আলোচনা চলছে।

বইতে সিনহা লিখেছেন- ২০১৭ সালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়ার পর বর্তমান সরকার আমাকে পদত্যাগ করতে এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেছে। সাবেক বিচারপতি জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ বোধ করছেন না। তার ভাষ্য- আমি এত ভীত থাকি যে, আমি ২৪ ঘণ্টা বাসাতেই থাকি।

সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে তার বাসা সবসময় পর্যবেক্ষণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আমার বাসায় যায় তাদের ছবি তোলা হয়।

ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই সরকার ভারতের সমর্থন পায়। শুধু তাই না, ২০১৪-এর নির্বাচনের পরে ভারত যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশকে বুঝিয়েছিল এই সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্য।

নিজেদের লাভের জন্য ভারত বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে জানিয়ে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ভারত বাংলাদেশকে সমর্থন করে। কারণ আওয়ামী লীগ সেখানে ভারতবিরোধী সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং ক্যাম্প বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, এটি শেষ পর্যন্ত ভারতের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের দুটি পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে হবে।

বই প্রকাশের জন্য কারও কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নেননি বলেও জানান বিচাপতি সিনহা।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে সরকার বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কাছ মোটা অংকের টাকা নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই বই লেখা হয়েছে। এমনকি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশন যোগদান শেষে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন “বিচারপিত সিনহার বই কারা লিখিয়েছে তা আমি জানি”। এই ষড়যন্ত্রের সাথে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।