সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দায়ের করা দুর্নীতির মামলা তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে সংস্থাটির মহাপরিচালক খান মো. নূরুল আমিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে দুপুরে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। মামলার এফআইআর আসছে, এখন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হবে। তদন্ত কর্মকর্তা বিচার-বিশ্লেষণ করবে। আইনের বাইরে যাওয়া যাবে না।’
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্সের (বিএনএ) সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দায়ের করা দুর্নীতির মামলার এজাহার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আইনের বাইরে যাওয়া যাবে না। তদন্ত কর্মকর্তা কী করবেন তা আমি বলতে পারব না। আমি তো অভিযোগ বিচার-বিশ্লেষণ এখনো করতে পারিনি। এটি আদালতের মাধ্যমে দুদকে এসেছে। আদালত তো কিছু না বুঝে আমাদের দেয়নি। তদন্ত আমাদের করতে হবে, এটা স্বতঃসিদ্ধ। কিছু একটা না থাকলে আদালত আমাদের দেবে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা যদি মনে করেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, তাহলে তাকে যথারীতি জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সেটা কীভাবে করবে ,তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারণ করবে। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করা ম্যান্ডেটরি না।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে দেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশের আইনে সব ব্যবস্থা রয়েছে। আনার প্রক্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে আছে। তবে এটা অনেক পরের বিষয়।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্সের (বিএনএ) সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মামলা দায়েরের পর তা ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতের শাহবাগ থানার জেনারেল রেকর্ডিং (জিআর) শাখায় পাঠানো হয়। মামলাটি দুর্নীতির অভিযোগের হওয়ায় পর দুদকে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে তিনি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ করেন।
মামলায় বলা হয়, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে দুর্নীতির একটি মামলা ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ হাইকোর্ট বাতিল করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৭ জুন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দুদকের লিভ টু আপিল খারিজ করেন। এমন পরিস্থিতিতে একটি পত্রিকায় ‘জামিন ছাড়াই বছর পার নাজমুল হুদা ও স্ত্রীর’ শিরোনামে গত ৩০ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেখানে দুদকের লিভ টু আপিল মঞ্জুর হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে আপিল বিভাগে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, দুদকের লিভ টু আপিল মঞ্জুর হয়েছে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার জমাদারের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ২০ জুলাই ডেকে নিয়ে যান এবং বলেন, একজন সংসদ সদস্য তাকে নগদ ২ কোটি টাকা দিতে চেয়েছেন যদি একটি মামলায় নাজমুল হুদার সাজা নিশ্চিত করেন। যাতে করে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হন। যদি ২ কোটি টাকা এবং আপিল বিভাগে ব্যারিস্টার হুদার প্রদত্ত আড়াই কোটি টাকার একটি ব্যাংক গ্যারান্টির রিলিজ আবেদনের বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টির ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রদান করেন তবে তিনি ও তার স্ত্রীর মামলাগুলোয় মুক্তির ব্যবস্থা নিবেন। যদি না দেন, তবে ব্যাংক গ্যারান্টিতে উল্লেখিত হাইকোর্টের মামলার পুনঃশুনানি করবেন এবং ব্যাংক গ্যারান্টি রিলিজের পথ বন্ধ করে দেবেন। এই প্রস্তাবে তিনি সম্মত না হওয়ায় রায় পাল্টে দিয়েছেন।