গুঞ্জনটা উঠেছিল গত বছর। আর সেটির সূত্র ছিল নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন। সেখানে বলা হচ্ছিল যদি রেক্স টিলারসনের জায়গায় নিকি হ্যালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন, তাহলে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হবেন ‘ফার্স্ট ডটার’ ইভানকা ট্রাম্প। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটেনি।
চলতি বছর এক টুইট বার্তায় টিলারসনকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প। আর তার জায়গায় সিআইএ-র পরিচালক মাইক পম্পেওকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাই তখনকার মতো ইভানকার দূত হওয়ার বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। তবে আবারও নতুন করে পুরনো গুঞ্জনটা উঠছে। তাহলে কী এবার জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হচ্ছেন ইভানকা?
আসলে এই গুঞ্জন ওঠার বেশ কিছু কারণও রয়েছে। যেমন হঠাৎ করেই কোনও কারণ না দেখিয়ে জাতিসংঘের দূতের পদ থেকে নিকি হ্যালির অবসরের ঘোষণা। আবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন টুইটার অ্যাকাউন্ট ইভানকার ফলো শুরু করা। যদিও শুধু এসব কারণেই যে তিনি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী দূত হচ্ছেন সেটি ভাবার কোনও কারণ নেই।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা ইভানকা নিজের কাজের মাধ্যমেই বিশ্ব দরবারে বিশেষ করে কূটনীতিক মহলে একটা স্থান তৈরি করে নিয়েছেন। নারী ও শিশুর অধিকার নিয়ে তার ভূমিকা, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক, জি-২০ সম্মেলনে তার বাবার প্রতিনিধিত্ব, সিউলে শীতকালীন অলিম্পিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বসহ বিভিন্ন কারণেই ইভানকা এই পদের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের একজন ফেলো রিচার্ড গোয়ান গত বছর রাজনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘দ্য পলিটিকো’র এক লেখায় যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘দূত ইভানকা ট্রাম্প’ আইডিয়া খুব একটা খারাপ না। তিনি লিখেন, হোয়াইট হাউজে ইভানকা ও জেরাডের নিয়োগের মধ্য দিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই স্বজনপ্রীতির সীমা অতিক্রম করেছি, যা দুই বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। তাহলে ইভানকাকে কেন জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত করা হবে না? সে কী এতোটাই খারাপ হবে?
অবশ্য হ্যালির কাছ থেকেও প্রশংসাপত্র পেয়েছেন ইভানকা। মঙ্গলবার ওভাল অফিসে বসে ইভানকাকে ‘ভালো বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন হ্যালি। এদিন অবশ্য বিশ্ব দরবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে হ্যালির কাজের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। ট্রাম্প বলেন, অনেক মানুষই তার স্থলাভিষিক্ত হতে চাইবেন। পাশে হ্যালিকে নিয়ে ট্রাম্প বলেন, অনেকেই আছেন যারা এই পদে কাজ করতে চাইবেন। এটা একটা দারুণ পদ, তিনি এই পদের উচ্চতা আরও বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছেন।
এদিকে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে হ্যালির উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। আর এজন্য তিনি সাউথ ক্যারোলাইনার সাবেক গভর্নর হ্যালির সঙ্গে আলোচনার কথাও জানিয়েছেন।
কিন্তু হ্যালির জায়গায় কার নিয়োগ হতে পারে? নিশ্চিত কিছু এখনও জানা না গেলেও আরও অনেকের সঙ্গে ইভানকার নামও শোনা যাচ্ছে। এ ধরনের গুঞ্জন হবে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছেন ইভানকা। তবে ট্রাম্প বলেন, জাতিসংঘে তার মেয়ে ‘অসাধারণ’ করবে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবে তার মেয়ে ‘দারুণ’ করবে। কিন্তু তিনি যদি হ্যালির জায়গা ইভানকাকে নিয়োগ দেন তাহলে স্বজনপ্রীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি অনেক নাম শুনেছি। আমি ইভানকার নাম শুনেছি। ইভানকা কেমন হবে? আমি মনে করি ইভানকা অসাধারণ হবে কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমি তাকে নিয়োগ দেবো। কারণ আমার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনা হবে, যদিও আমি নিশ্চিত বিশ্বে তার চেয়ে যোগ্যতম আর কেউ নেই। এমনকি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার মেয়ে ‘ডায়নামাইট’ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তবে বাবার এমন মন্তব্যের পর এক টুইট বার্তায় ইভানকা লিখেন, আরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে কাজ করা সম্মানের এবং আমি জানি হ্যালির জায়গায় একজন অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তিকে মনোনীত করবেন প্রেসিডেন্ট। তবে সেই ব্যক্তি আমি নই।
কিন্তু শেষপর্যন্ত ট্রাম্প যদি সবাইকে উপেক্ষা করে ইভানকাকে মনোনয়ন দেন, তারপরও তার নিয়োগ প্রক্রিয়া অতোটা সহজ হবে না। মার্কিন সিনেটের শুনানিতেও হয়তো বেশ বেগ পোহাতে হবে ইভানকাকে। এটি ছাড়া আরও কারণ আছে, যেজন্য তাকে হয়তো নিয়োগ দেয়া হবে না। যেমনটা বলছিলেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাডেক। তিনি বলেন, কেন্দ্রের স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইনের কারণে ইভানকা এই পদে চাকরি করলে কোনও বেতন পাবেন না, তাই টেকনিক্যালি তাকে নিয়োগ দেয়াও হবে না।
ট্রাম্পের প্রশাসনে এমনিতেই নারীর সংখ্যা কম। আর শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্বের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী বলে পরিচিত ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিকি হ্যালি। তাই তার চলে যাওয়াতে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেটি কী পূরণ করতে পারবেন ট্রাম্প? কেননা ট্রাম্পের আশেপাশে এক এক করে যখন সব আলো নিভে যাচ্ছিল তখন বিশ্ব মঞ্চে তার মশাল শক্ত হাতেই ধরে ছিলেন হ্যালি।