logo
আপডেট : 20 October, 2018 02:20
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব
ঢাকা অফিস

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব

রাজধানীর ওয়াইজঘাটে ভক্তরা প্রতিমা বিসর্জন দিচ্ছেন

খোল-করতাল আর ঢাকের বাজনার সঙ্গে নেচেছেন মানুষ। কেউ কেউ দেব-দেবীর উদ্দেশে দিচ্ছিলেন উলুধ্বনি। এমন উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। 

এই বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব। গতকাল বিকাল থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজঘাটের বিনা স্মৃতি স্নানঘাটে ঢাকা মহানগর পূজা কমিটির নেতৃত্বে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। 

একই সঙ্গে সারা দেশে এভাবেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে থাকেন পুণ্যার্থীরা। এর আগে সকালে রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে সিঁদুরখেলার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার দর্পণ বিসর্জন দেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। হিন্দু সধবা নারীরা দেবীর প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে-অন্যকে সিঁদুর পরান।

এ সময় ঢাকের তালে তালে নাচ, একে-অপরকে রঙ দিয়ে রাঙানো এবং সেলফি কিংবা ছবি তোলেন অনেকে। দুপুরের পর রাজধানী ঢাকার ২৩৪টি পূজামণ্ডপে চলে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। এর মধ্যে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রাটি পুরনো ঢাকার ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়। বড় বড় ট্রাকে করে কল্যাণের দেবী দুর্গাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জন ঘাটে। এ সময় হাজার হাজার নারী-পুরুষের ভক্তি-অর্চনা আর আনন্দ-কলরোলে পুরো শহর মেতে ওঠে। 

বিকাল ৩টার পর ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় মন্দির থেকে বিজয়ার শোভাযাত্রা শুরু হয়ে জগন্নাথ হল, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, পুলিশ হেড কোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, গুলিস্থান, নবাবপুর, রায় সাহেব বাজার, সদরঘাটের ওয়াইজঘাট বিনা স্মৃতিঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেয়। এ সময় পুরো পথে আইন-শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। 

এদিকে রাজধানীর উত্তর অংশের বিভিন্ন মণ্ডপ থেকেও যেসব শোভা যাত্রা বের হয় সেগুলোতেও বিপুল সংখ্যক সনাতনীদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাকে করে প্রতিমা বিসর্জনের পাশাপাশি নারী-পুরুষের অনেকেই ট্রাকে করে দেবী দুর্গার পিছু পিছু যেতে দেখা গেছে। এ সময় ‘বল দুর্গা মায় কি, জয়’ ধ্বনীতে আশপাশের এলাকা মুখর হয়ে উঠে। 

এবার ৮ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবীপক্ষ। এরপর একে একে ষষ্ঠী থেকে দশমী। সবগুলো তিথিতেই রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলো ছিলো পূজারীদের বিনম্র প্রার্থনা আর নানান আনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ। 

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় বলেন, এবারের পূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পালন হয়েছে। কোথাও বড় ধরনের কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের এ আয়োজন শেষ হলো। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বরাবরের ন্যায় এবারও উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র এ পূজার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

বাংলা পঞ্জিকা মতে, দুর্গাপূজার এবারের বার্তা ছিল ছত্রভঙ্গ। মা দুর্গা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে নবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে দুনিয়ায় আসবেন। স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে ছন্দপতন হিসেবে এ ছত্রভঙ্গকে বোঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এ পুরোহিত। এটা ঘোড়ায় চড়ে আসার ফল। যাবেন দোলায় চড়ে। যার ফল হলো ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, পোকা-মাকড়, রোগ-জীবাণুসহ যাবতীয় অনিষ্ঠকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন দুর্গতি নাশিনী মা দুর্গা। পরের একটি বছর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির অবারিত দুয়ার খুলে মা দুর্গা বিদায় নেবেন বিজয়া দশমীতে। 

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার জানিয়েছেন, এবার সারা দেশে ৩০ হাজার ২৫৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যা গত বছরের তুলনায় ৮৬৩টি বেশি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা ২৩৪টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২২৯টি।