logo
আপডেট : 27 October, 2018 03:00
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা চলছেই: জাতিসংঘ
মেইল রিপোর্ট

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা চলছেই: জাতিসংঘ

ফাইল ছবি

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর এখনও গণহত্যা চলছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন।জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের কোনো আগ্রহ নেই।

সু চি ক্ষমতায় আসার পরও অতীতের চেয়ে পরিস্থিতি খবু বেশি বদলায়নি। বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠকের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে এখনও রোহিঙ্গা নিধন করা হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতন ও গণহত্যা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশ এখনও চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তকারী ইয়াংহি লিও বক্তব্য দেন। বুধবার মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, আইভরি কোস্ট, কুয়েত, পেরু এবং পোল্যান্ড রোহিঙ্গা নির্যাতনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেয়। চীন, রাশিয়া ও বলিভিয়া ‘না’ ভোট দিয়েছে এবং গিনি, ইথিওপিয়া ও কাজাখস্তান ভোট দেয়নি। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাউ দো সুয়ান ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে ‘ত্রুটিপূর্ণ, পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক’ অভিহিত করে বলেন, মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

মিয়ানমারে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তকারী ইয়াংহি লি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যাশা করেছিল মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি’র নেতৃত্বে দেশটির পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে অনেক আলাদা হবে।

কিন্তু বাস্তবে এটি অতীতের চেয়ে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে ইয়াংহি লি বলেন, শান্তিতে নোবেলজয়ী সাবেক রাজনৈতিক বন্দি এবং বর্তমানে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের নেতৃত্ব দেয়া সু চি রোহিঙ্গাদের ওপর ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন এবং তাদের গ্রাম পুড়িয়ে মারার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাধ্য হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়েছে।
মিয়ানমার সরকার ক্রমশ দেখিয়েছে যে তাদের সম্পূর্ণরূপে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কোনো আগ্রহ নেই। দেশটির সরকার ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনকে সমর্থন করে না। লি বলেন, এরকম চলতে থাকলে মানুষ নিরপেক্ষভাবে ন্যায্যবিচার পাবে না।

রোহিঙ্গা নিধনে দোষীদের শনাক্ত ও শাস্তি দেয়া হবে না। এপির খবরে বলা হয়েছে, সু চি’র সরকার রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নিজস্ব তদন্ত পরিচালনা করেছে।

এছাড়া মিয়ানমার সরকার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে। যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রোহিঙ্গাদের গণহত্যার জন্য দেশটির শীর্ষ সামরিক নেতাদের বিচার করা উচিত।
মারজুকি দারুসমান সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার সরকারের কঠোর অবস্থান এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা। তাদের অব্যাহত অস্বীকার, জাতীয় সার্বভৌমত্বের আচ্ছাদনে নিজেদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সাম্প্রতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ৪৪৪ পৃষ্ঠার বিবরণী প্রত্যাখ্যানের কারণে মিয়ানমারের কাছ থেকে জবাবদিহি কোনোভাবেই আশা করা যায় না।

প্রধানমন্ত্রীর তিন দফা প্রস্তাব পুনরুল্লেখ : এদিকে বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ সভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যে সম্প্রতি ৭৩তম সাধারণ পরিষদের হাই-লেভেল সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সংকটের সমাধানে যে তিনদফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলেন তা পুনরায় উল্লেখ করেন।

তিন দফা প্রস্তাবনা হল- প্রথমত, মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গৃহীত বৈষম্যমূলক আইন, নীতি এবং অনুশীলন বাতিল করতে হবে। সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আস্থা বিনির্মাণ, সুরক্ষা ও অধিকারের নিশ্চয়তা এবং রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিকত্বের পথ সুগম করার মাধ্যমে মিয়ানমারকে অবশ্যই একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

প্রয়োজনে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটি ‘সেফ জোন’ তৈরি করতে হবে। তৃতীয়ত, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশমালার আলোকে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস অপরাধ প্রতিরোধে দায়বদ্ধতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

একই সঙ্গে রাষ্ট্রদূত মাসুদ দৃঢ়ভাবে বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে প্রত্যাবাসন করা। এই লক্ষ্য পূরণে তিনি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনে তুলে ধরা অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার সাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্ব দেন।