logo
আপডেট : 5 November, 2018 01:40
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা
সংসদ ভেঙে নির্বাচনের সুযোগ সংবিধানেই আছে
ঢাকা অফিস

সংসদ ভেঙে নির্বাচনের সুযোগ সংবিধানেই আছে

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার সাংবিধানিক ও আইনগত দিক নিয়ে দেশের সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

বৈঠকে সংবিধানের আলোকে সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচন এবং সহায়ক সরকার গঠনে বিভিন্ন প্রস্তাবনা উঠে এসেছে।

বৈঠকে বলা হয়, সংসদ ভেঙে নির্বাচন করার কথা সংবিধানেই রয়েছে। সংবিধানের অন্তত ১০ জায়গায় এ বিষয়ে উল্লেখ আছে।

অতীতে যত নির্বাচন হয়েছে এর মধ্যে বেশিরভাগই সংসদ ভেঙে (বিলুপ্ত) হয়েছে। বৈঠকে উঠে আসা এসব প্রস্তাবনা সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে দেয়া হতে পারে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রোববার রাতে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের চেম্বারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সন্ধা ছয়টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত স্থায়ী বৈঠকে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আব্দুল মালেক রতন, আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, ঢাবি আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, একই বিভাগের শিক্ষক ড. বোরহান উদ্দিন, আইন বিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক সালেহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতেই ড. শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সংবিধান ও আইনি কাঠামো পরিবর্তন সম্ভব। আইনজীবী হিসেবে আইনে কী কী কাঠামো আছে এ বিষয়গুলো তারা (ঐক্যফ্রন্ট নেতারা) জানতে চেয়েছন।

‘সে ব্যাপারে আলোচনা করে আমরা আলোকপাত করব। তারপরে রাজনীতিবিদরা কী করবেন সেটা তাদের ব্যাপার।’

তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে নির্বাচন করার সুযোগ সংবিধানের মধ্যেই রয়েছে। সংবিধানের অন্তত দশ জায়গায় একথা বলা আছে।

‘একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে করা যায়, সেই লক্ষে আমরা কয়েকজন সংবিধান ও আইন বিশেষঞ্জ বৈঠকে বসছি। আমাদের উদ্দেশ্য কীভাবে বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ হওয়া যায়।’

শাহদীন মালিক বলেন, বাংলাদেশে অতীতে যত নির্বাচন হয়েছে, এর বেশিরভাগই হয়েছে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে। সংসদ রেখে নির্বাচন হলে সমস্য কী-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে একদলের সুযোগ সুবিধা বেশি থাকে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং হয়না।

‘সংসদ মুলতবি রেখে নির্বাচন করার কথা সংবিধানের কোথাও নেই।’

সংলাপে সংবিধানের এ বিষয়টি উপস্থাপন করার জন্য আজ আপনারা বৈঠকে বসেছেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এটা সংলাপের জন্য নয়। রাজনীতিবিদরা কি করবেন এটা তাদের ব্যাপার। আমরা বসেছি সংবিধানের মধ্যে থেকে সংসদ ভেঙ্গে ভাল নির্বাচন করা যায় কিনা-সে বিষয়ে।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ অহমদ গণমাধ্যমের কাছে কিছু বলতে চাননি।

তবে আগামী ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার বিষয়ে বলেন, তফসিল ফাইনাল কিছু নয়। সবকিছু নির্ভর করবে সরকারের স্বদিচ্ছার ওপর।

ফের সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা সোমবার বিকালে পাঁচটায় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনা হবে।

এদিকে বৈঠকে উপস্থিত হওয়া একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার সাংবিধানিক ও আইনগত দিক নিয়ে আলোচনা হয়। সংবিধানের আলোকে সংসদ ভেঙে নির্বাচন এবং সহায়ক সরকার গঠনে বিভিন্ন প্রস্তাবনা উঠে আসে।

রোববার সকালে আবার সংলাপে বসার আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।

চিঠিতে শেখ হাসিনার উদ্দেশে ড. কামাল লেখেন, গত ১ নভেম্বর গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ জন্য ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ধন্যবাদ জানাই।

দীর্ঘ সময় আলোচনার পরও আমাদের আলোচনাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই দিন আপনি বলেছিলেন আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারই ভিত্তিতে ঐক্যফ্রন্ট জরুরি ভিত্তিতে আবারও আলোচনায় বসতে আগ্রহী।

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার সাংবিধানিক ও আইনগত দিক বিশ্লেষণের জন্য উভয় পক্ষের বিশেষজ্ঞসহ সীমিত পরিসরে আলোচনা করা প্রয়োজন।

চিঠিতে ড. কামাল প্রধানমন্ত্রীকে জানান, সংলাপ শেষ হওয়ার আগে তফসিল ঘোষণা না করার জন্য নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।