যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। অনেক স্থানেই আগাম ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মূল ভোট শুরু হয়েছে ৬ নভেম্বর। এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফল আগামী দুই বছর ও পরবর্তী সময়ের জন্য মার্কিন রাজনীতির গতি-প্রকৃতি ঠিক করে দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের প্রার্থী হননি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ভোটারদের উপস্থিতি কম হতে পারে।
কিন্তু ৬ নভেম্বরের ভোটের ফলাফল ট্রাম্পের শাসনামলের শেষ দুই বছরে তার শাসন পরিচালনার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই নির্বাচনে বেশ কিছু ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ আকারে সামনে এসেছে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের (হাউস) ৪৩৫টি আসন, ১০০ সদস্যের সিনেটের ৩৫টি আসন এবং ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩৬ টির গভর্নর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি এখন কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউস নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু তাদের বিরোধী শিবির ডেমোক্র্যাটরা এবার ‘নীলের উত্থান’ উত্থান দেখছে। এই বছর অবসর নিয়েছেন বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা। ফলে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ডেমোক্র্যাটদের প্রয়োজন মাত্র ২০টি আসন। কিন্তু সিনেটে রিপাবলিকানরা নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখবে এবং তা আরও সুসংহত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ৩৫টির মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের রয়েছে ২৬টি (২ জন স্বতন্ত্র) এবং রিপাবলিকানদের ৯টি। ফলে ডেমোক্র্যাটদের সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে সবগুলো আসনে জিততেই হবে এবং রিপাবলিকানদের কাছ থেকে আরও দুটি আসন কেড়ে নিতে হবে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এসব সিনেট আসনের দশটিতে ট্রাম্প জিতেছিলেন এবং ৫টি আসনে বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থীরা।
হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে কথা বলছে ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর থেকে সবগুলো মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল গড়ে ন্যূনতম ২৫টি আসন হারিয়েছে। আর প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা সূচক যখন ৫০-এর নীচে নেমে যায় তখন ৩৭টি আসন হারাতে হয়েছে।
এছাড়া বিশ্লেষকরা এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য গণভোট হিসেবে দেখছেন। এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বেশ কিছু ইস্যু সামনে উঠে এসেছে।
অভিবাসন: উভয় দলের জন্যই ইস্যুটি ভোটারদের কাছে টানার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। রিপাবলিকানরা অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্পের কঠোর আইনের পক্ষে আর ডেমোক্র্যাটরা কঠোর অভিবাসী আইনের বিরোধিতা করছে। উভয় দলই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অভিবাসী ইস্যুতে ফায়দা তুলতে চাইছে।
ডেমোক্র্যাটরা মনে করছে ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিষোদগারের ফলে তারা তরুণ ভোটার, সংখ্যালঘু ও আধুনিক শহুরেদের সমর্থন পাবে। আর রিপাবলিকনদের ধারণা অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের কারণে যেসব ভোটার মনে করেন ডেমোক্র্যাটরা মার্কিন নাগরিকদের চেয়ে অভিবাসীদের নিয়ে বেশি ভাবে, তারা ভোট দিতে আসবে।
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ: ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্দুক হামলার পর অগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনকারীরা আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ভোটারদের মধ্যে প্রচারণা চালিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা: সর্বশেষ গ্যালাপ জরিপে উঠে এসেছে মার্কিন ভোটাররা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন। রিপাবলিকানরা অ্যাফোরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট নামে স্বাস্থ্যসেবা বিল প্রণয়ন করলেও তারা ওবামাকেয়ারকে এখনও ছাপিয়ে যেতে পারেনি। ফলে এই নির্বাচনে ভোটাররা সেই দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে যারা তাদের চিকিৎসাবীমার খরচ বাড়িয়েছে। ট্রাম্পের শাসনামলে মার্কিন নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে।