২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে বা মার্চে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জানা যায়, বুধবার সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখায় এ দাবি জানায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সাত দফার আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চারটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখিত দিয়েছে দ্বিতীয় দফার সংলাপে।
ঐক্যফ্রন্ট তাদের রূপরেখায় প্রথমেই নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছে। সেখানে তারা জানায়, সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রসঙ্গ আছে। সংবিধানের ১২৩ (৩) (খ) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতিকে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। সে হিসেবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে বা মার্চে অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঐক্যফ্রন্ট জানায়, সরকার এ প্রক্রিয়া মেনে নিলে সব দলের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা এনে তা পুনর্গঠন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগের কথা বলেছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সমঝোতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন কমিশন সচিবও নিয়োগ চায় ঐক্যফ্রন্ট।
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি জন্য খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের জামিনে মুক্তি এবং সরকার পক্ষ যেন জামিনের বিরোধিতা না করে, সে কথা ঐক্যফ্রন্ট তৃতীয় প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে। সভা-সমিতির অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করার কথাও বলেছে।
ঐক্যফ্রন্ট আরও বলে, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং চিঠিপত্র, টেলিফোন ও মোবাইলের কথাবার্তা ফাঁস করার মতো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকাসহ দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। ইভিএম ব্যবহার না করা, সেনাবাহিনী মোতায়েন ও বিচারিক ক্ষমতা এবং নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করতে হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে একজন উপদেষ্টা ও ১০ সদস্যের উপদেষ্টাবিশিষ্ট নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দেয়।
তবে বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সংলাপেই এ প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবের জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে, এটা সংবিধানসম্মত না। এই দাবি মেনে নিলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে।
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ জন উপদেষ্টার বিষয়ে প্রস্তাব মানা হবে না, কারণও নেই।
সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের মূল দাবিগুলোর কোনোটার ব্যাপারেই সরকার বা আওয়ামী লীগ থেকে আশা করার মতো কিছু পায়নি। তবে খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ বলেছে, এটা আদালতের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা হবে বলে ঐক্যফ্রন্টকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বাস দেন। সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হবে না। তবে তাদের মোতায়েন করা হবে, সেটাও জানায় আওয়ামী লীগ।
সংলাপ শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের জানান, আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায় না হলে তারা আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবেন।
এর আগে ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। সেখানে ফলপ্রসূ কিছু না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয়বার সংলাপ চেয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট।