সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার থেকে: নাগরিকত্ব, নিজ জমিতে ফেরা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি নয়। পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য তালিকা তৈরির কথা শুনে তাদের অনেকেই ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সফর করা জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের অভিমত, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। তবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জানান, ১৫ নভেম্বর থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তুত।
টেকনাফ কেরুণতলী প্রত্যাবাসন ঘাট। এখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য তৈরি হয়েছে ৩৩টি ঘর ও একটি জেটিঘাট। একইভাবে এই ঘাটটির মতো ঘুমধুমে আরও একটি ঘাটে তৈরি হয়েছে ৫৭টি ঘর। এসব ঘাট দিয়ে ১৫ নভেম্বর শুরু হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। সোমবার সরেজমিনে টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি গিয়ে এসব চিত্র দেখা যায়।
এদিকে মিয়ানমার সফরের পর গত শনি ও রোববার জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনার এবং যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা-এশিয়ার শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক উপ সহকারী মন্ত্রী রিচার্ড অলব্রাইট কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের মতে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এখনো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়নি। একই অভিমত রোহিঙ্গা বিষয়ক জেলা টাস্কফোর্সের সদস্যেরও।রোহিঙ্গা বিষয়ক জেলা টাস্কফোর্স সদস্য দিদারুল আলম রাশেদ বলেন, গতবছরও রোহিঙ্গাদের নেয়ার কথা হলেও তারা আদৌ নেয়নি। এই যে আবার তাদের নেয়ার কথা চলছে, আমার কাছে সেটাও সন্দেহীন।
এ অবস্থায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কথা শুনে আতংকে আছেন রোহিঙ্গারা। তাদের দাবি, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও নিজ জমিতে ফেরার কোন নিশ্চয়তা না দেয়ায় দেশে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। উখিয়ার জামতলি জি ব্লকের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি (মাঝি নামে পরিচিতি) নুরুল আমিন বলেন, মানুষের যে সকল মৌলিক অধিকার আছে তা আমরা চাই। যেমন বিশেষ করে আমাদের নাগরিকত্ব, জমিজমা ও নিরাপত্তা। এসব মিয়ানমার নিশ্চিত করলে আমরা স্বদেশে ফিরতে অবশ্যই রাজি।
একই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা ছৈয়দ আলম বলেন; মিয়ানমার আন্তর্জাতিক মহলের চাপে আমাদের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আবার যাদের নিয়ে যাবে তাদেরকে ক্যাম্পে রাখবে। এটি তো মিয়ানমারের চলচাতুরী।
তবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জানালেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। রিপিটিশন সেন্টার আমাদের ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তুতির কাজ যেসব রোহিঙ্গাদের জানানো হয়েছে মিয়ানমারের যে তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে।
ইতোমধ্যে প্রথম দফায় প্রত্যাবাসন হতে পারে এমন ২২৬০ জন রোহিঙ্গার তালিকা জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।