logo
আপডেট : 15 November, 2018 02:20
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা আজ : নেই তৎপরতা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা আজ : নেই তৎপরতা

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার থেকে: দুই দেশের সরকারের গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। সময় সন্নিকটে আসলেও সেই ধরনের তৎপরতা চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও নানা ‘দাবি’ তুলে প্রত্যাবাসনে বিঘ্ন ঘটাতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার তৃতীয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চলতি মাসের ১৫ নভেম্বর প্রথম দফায় ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই লক্ষ্যে কাজও করে সরকার। ইতোমধ্যে টেকনাফের কেরুনতলীতে প্রত্যাবাসন ঘাট প্রস্তুত হয়েছে বলে দাবি করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। কিন্তু আদৌ বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) প্রত্যাবাসন শুরু হবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা। তবে তারাও আশাবাদী।

টেকনাফের কেরুনতলীতে প্রত্যাবাসন ঘাট প্রস্তুত হওয়ার কথা বললেও সেখানে মাত্র একদিন পর প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা নেই। বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন হলে আজ-কালের মধ্যে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রোহিঙ্গাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু সেই ধরনের কোনো প্রস্তুতি নেই। তাই অনেকে আশঙ্কা করছেন, নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী প্রত্যাবাসন নাও হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যাবাসন বিঘ্ন ঘটাতে অপতৎপরতা শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। নানা ‘দাবি’ তুলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন খোঁজ নিয়ে এমন কয়েকটি পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে। আবার যারা (তালিকায় অন্তর্ভুক্ত) ক্যাম্পে এখনো আছে, তারা দাবি করছে তাদের শর্তগুলো পূরণ না হলে মিয়ানমারে ফিরবে না।
 
টেকনাফের উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (ক্যাম্প-১) কথা হয় রোহিঙ্গা মো. আমিনের (৪৫) সাথে। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিনিসহ আটজন। তিনি দাবি করছেন, ওই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মাহাদু তাকে ডেকে নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন। এমনকি প্রত্যাবাসন তালিকায় তার পরিবারের নাম আছে বলে জানায় ওই রোহিঙ্গা নেতা।

মো. আমিন বলেন, ‘আমাদেরকে কোনো কিছু স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের কিছু নির্ধারিত দাবি আছে, সেগুলো পূরণ না হলে কোনো অবস্থাতেই ফেরত যাব না। কারণ দাবি পূরণ না হলে সেদেশে (মিয়ানমার) গিয়ে আবারো নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে।’

শর্তগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত জাতীয়তা সনদ দিতে হবে। মিয়ানমারে নিরাপদভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেখানে গিয়ে ক্যাম্পে থাকব না, নিজস্ব বসতভিটায় বসবাসের সুযোগ দিতে হবে।’

একই ক্যাম্পের সি-ব্লকের বাসিন্দা মো. কাশেম (৪৫) ও বি-ব্লকের নুরুল হক জানান, কয়েকদিন আগে মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মাহাদু তাদেরকে প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম আছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন তারা ফেরত যেতে প্রস্তুত নন। আগে তাদের দাবিগুলো সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে হবে।

সম্প্রতি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিনিধি দল উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসলে সেখানেও রোহিঙ্গারা তাদের দাবিগুলো মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের কাছে তুলে ধরেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বরাবরের মতোই বললেন, ‘যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুতি চলছে। সবকিছুই প্রস্তুত, দেখা যাক কী হয়!’

এদিকে, মিয়ানমারও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সাথে একমত। এনিয়ে তাদেরও প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়েছে। প্রথম দফায় ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। নৌপথ ও স্থলপথে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া হবে। যাদেরকে নৌপথে নিয়ে যাওয়া হবে, তাদেরকে নাফখোয়া ক্যাম্পে রাখা হবে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে সে দেশ থেকে প্রাণে বাচঁতে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। গত বছরের ২৪ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করে। চুক্তিতে দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত যেতে পারেনি।