logo
আপডেট : 4 December, 2018 00:01
এবার বেঙ্গালুরুতে বাঙালিদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে উচ্ছেদের তোড়জোড়
মেইল রিপোর্ট

এবার বেঙ্গালুরুতে বাঙালিদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে উচ্ছেদের তোড়জোড়

দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে কয়েক হাজার গরিব বাংলাভাষীকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে শহরের পৌর কর্তৃপক্ষ, যেখানে ক্ষমতায় আছে বিজেপি।

উচ্ছেদ-আতঙ্কে থাকা এই বাঙালিদের বেশিরভাগই মুসলিম এবং তারা নিজেদেরকে পশ্চিমবঙ্গেরই লোক বলে দাবি করেছেন।

তাদের কাছে নিজেদেরকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার মতো পরিচয়পত্র থাকলেও বিজেপির নেতা-বিধায়করা বলছেন, সেগুলো বেশিরভাগই জাল এবং তাদের কর্ণাটক থেকে উচ্ছেদ করতেই হবে।

এদিকে এই বাঙালিদের বেঙ্গালুরু থেকে উচ্ছেদ করতে সোমবার পর্যন্ত চূড়ান্ত সময়সীমা থাকলেও বামপন্থীদের আন্দোলনের মুখে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়েছে।

ভারতের আসামে এনআরসি’র চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকেই দেশটিরর বেশকিছু অঞ্চলের অবৈধ বিদেশিদের উচ্ছেদের যে হিড়িক পড়েছে, সেই তালিকায় সবশেষ যোগ দিয়েছে বেঙ্গালুরু।

তিন মাস আগে ভারতের প্রথম সারির একটি টিভি চ্যানেলের খবরে বলা হয়, বেঙ্গালুরুর নানা বস্তিতে হাজার হাজার ‘বাংলাদেশি’ অবৈধভাবে বাস করছেন এবং তারা প্রায় প্রত্যেকেই বেআইনিভাবে জুটিয়ে নিয়েছেন ভারতীয় পরিচয়পত্র।

এই চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে একজন বাঙালিকে বলতে শোনা যায়, বাংলাদেশে জমি ও কাজ নেই বলেই তারা বাধ্য হয়ে সপরিবারে ভারতে চলে এসেছেন, পয়সা দিয়ে জোগাড় করে নিয়েছেন ভারতের আইডি।

এরপর থেকেই বেঙ্গালুরুতে ‘বাংলাদেশি’ উচ্ছেদ অভিযান ধীরে ধীরে তুঙ্গে ওঠে। আর এর নেতৃত্ব দিতে থাকেন মহাদেবপুরার বিজেপি এমএলএ এবং রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী অরবিন্দ লিম্বাভালি। আরএসএসের এই প্রচারক কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবেই বরাবর পরিচিত।

লিম্বাভালি সম্প্রতি এক টুইট-বার্তায় ঘোষণা করেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশিরা’ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি। কোনও শিল্প মালিক তাদের কারখানায় বা সাইটে কাজে লাগালে কড়া শাস্তি পেতে হবে।

এদের উচ্ছেদ করার জন্য শহরের সোনডেকোপ্পাতে ডিটেনশন সেন্টার তৈরি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এই বিষয়ে কর্ণাটক বিজেপির মুখপাত্র ড. ভামান আচারিয়া বলেন, আগে আমাদের রাজ্যে অভিবাসী শ্রমিকরা আসতেন বিহার বা উড়িষ্যা থেকে। কিন্তু গত দুই-তিন বছর ধরে যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি।

তিনি বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে তারা প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে আসেন, সেখান থেকে পাড়ি দেন দক্ষিণ ভারতে। কিন্তু পুলিশ এখন দেখতে পাচ্ছে তাদের বেশিরভাগের পরিচয়পত্রই জাল, তারা এদেশে অবৈধভাবে বাস করছেন।

ইতোমধ্যে বেঙ্গালুরুর পৌর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেয়, ৩ ডিসেম্বরের মধ্যেই শহরে কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের সব বস্তি ভেঙে তাদেরকে কলকাতার ট্রেনে তুলে দেয়া হবে।

আতঙ্কিত বাঙালিরা যোগাযোগ করেন পশ্চিমবঙ্গে তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে, যাদের একজন রায়গঞ্জের সিপিএম এমপি মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, এরা আসলে নদীয়া, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার লোক।

তিনি বলেন, যখন থেকে বিজেপি সভাপতি উইপোকার মতো ফ্যাসিস্ট ভাষা ব্যবহার করে বাঙালিদের আক্রমণ করা শুরু করেছে, তখন থেকেই এদের ওপর বিপদ নেমে এসেছে। ছোটবড় বিজেপি নেতারাও চরম উৎসাহে বাঙালি উচ্ছেদে নেমে পড়েছে।

সেলিম বলেন, বিজেপি কলকাঠি নেড়ে বেঙ্গালুরুর মিউনিসিপাল কর্পোরেশনকে দিয়ে এই উচ্ছেদ করাতে চাইছে। অথচ এদের প্রায় সবারই আঁধার কার্ড, গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিচয়পত্র আছে এবং এদের বেশিরভাগই অত্যন্ত গরিব মুসলিম।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শ্রমিক শাখার লোকজন ও বেঙ্গালুরুর আইটি সেক্টরের অনেক অ্যাক্টিভিস্ট এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিশাল জমায়েত করে দুদিন বাড়তি সময় আদায় করেছেন। এর মধ্যে আমরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে কী করা যায় দেখছি।

তবে বিজেপির দাবি, কর্ণাটকে নাকি অন্তত চার লাখ ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বাস করছেন ও স্থানীয় মানুষের রুটিরুজিতে ভাগ বসাচ্ছেন। তাই এই ইস্যুতে আপোষ করা সম্ভব নয়।