মেসি-রোনালদোর ছায়াটা বেশ বড়। ওই ছায়ায় পড়ে রোদটা ঠিক ঠিকরে পড়েনি তাদের গায়। কিন্তু তারাও সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন। তাদের কেউ খেলে যাচ্ছেন এখনো। কেউবা নিয়েছেন অবসর। পেশাদার ফুটবল খেলে গেলেও অনেকেই আবার আলোর বাইরে। মেসি-রোনালদোর আগেও ছিলেন কিছু তারকা। যারা ছুঁতে পারতেন ব্যালন ডি'অরের শিরোপা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের নাম অন্য তালিকায়।
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা: ২০০৯ সালের কথা। চেলসির বিপক্ষে তার গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলো বার্সা। তার ওই গোলটা ২০০৯ সালের সবচেয়ে দামি গোলও বোধহয়। বার্সা সেবার ট্রেবল জিতল। ২০১০ বিশ্বকাপে তার গোলেই ফাইনালের শিরোপা জিতলো স্পেন। কিন্তু ব্যালন ডি'অর জেতেননি ইনিয়েস্তা। ওই শেষ নয়। এরপরও ইনিয়েস্তা তার ফুটবল শৈলীতে বুদ করে গেছেন দর্শকদের। কিন্তু ছোঁয়া হয়নি তার ব্যালন ডি'অর। কারণ হয়তো শেষ ১০ বছর মেসি-রোনালদোর পাঁচটা করে ব্যালন ডি'অর দখল করে নেওয়া।
পাউলো মানদিনি: ১৯৯৪ বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার সম্ভবত ইতালির ডিফেন্ডার মালদিনি। ফাইনালে ব্রাজিলকে প্রায় দুই ঘন্টা আটকে রাখার বড় কৃতিত্ব তার। বিশ্বের সেরা ফুল ব্যাক বলা যেতে পারে তাকে। কিন্তু মিলান ডিফেন্ডার ব্যালন ডি'অর জিততে পারেননি। তিনি হয়তো স্বান্তনা দিতে পারেন, ফুলব্যাকরা ব্যালন ডি'অর জেতে না।
জাভি হার্নান্দেজ: তার সময় ক্লাব বার্সেলোনা সম্ভবত বিশ্বের সেরা দল ছিল। সেরা জাতীয় দল ছিল স্পেন। কারণ জাভি। ম্যাচ নিয়ন্ত্রন করতেন মাঝমাঠ থেকে দুই পায়ে। বিশ্বকাপ, ইউরো, চ্যাম্পিয়নস লিগ কি জেতেননি তিনি। মেসি-রোনালদোর সময়ে খেললেও সেরাদের সেরা তিনি তা সম্ভবত ওই মেসি-রোনালদোরও মানতে আপত্তি খুব কম। কিন্তু ব্যালন ডি'অর হাতে নিয়ে পোজ দেওয়া হয়নি তার।
জিয়ানলুইজি বুফন: লেভ ইয়াসির ১৯৬৩ সালে গোলরক্ষক হিসেবে ব্যালন ডি'অর জিতেছিলেন। তার পাশে যদি ইকার ক্যাসিয়াস কিংবা বুফনের নাম বসতো খারাপ দেখাতো না। বুফনের মুখের শক্ত চামড়া এখন ঢিলে হয়েছে। কিন্তু বাজের চোখ আর বাঘের থাবার মতো গ্লাভসে তার ছোঁয়া লাগেনি। কিন্তু বুফনরা যে গোল ঠেকান, গোল তো করেন না। আর তাই ব্যালন ডি'অর ওঠেনি তার হাতে।
অ্যারিয়েন রোবেন: অনেকের মতে মেসি-রোনালদোর পরে; অনেকের মতে মেসি-রোনালদোর মতো যদি কারো ম্যাচের রং বদলানোর প্রতিভা থাকে তিনি অ্যারিয়েন রোবেন। খেলে যাচ্ছেন এখনও। কিন্তু ব্যালন ডি'অর জেতার স্বপ্ন আর দেখেন না। যখন দেখেছিলেন তখন যে হতাশ হতে হয়েছে।
থিয়েরি অরি: জাভি, ইনিয়েস্তার মতো তিনিও বার্সেলোনায় খেলেছেন। ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জিতেছেন। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছেন। এফএ কাপ উঠেছে তার হাতে। বিশ্বকাপ উঠেছে অঁরির হাতে। ওঠেনি কেবল ব্যালন ডি'অর।
ফিলিপ লাম: ডিফেন্ডাররা ব্যালন ডি'অর জেতেন না। কিন্তু লাম ছিলেন আলাদা ব্যাপার। সম্ভবত তিনি তার সময়ে বিশ্বের সেরা রাইট ব্যাক, লেফট ব্যাক এবং সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ছিলেন। জার্মান এবং বায়ার্ন মিউনিখে তিনি এই তিন পজিশনে দলের নিঁখুন কৌশলের অংশ হয়েছেন। ২০০৬ সালে ইতালির ফ্যাবিও ক্যানাভেরো যদি ব্যালন ডি'অর জিততে পারেন লাম কেনো নয়। এ প্রশ্ন এখনও লাম ভক্তদের কাছে অমিমাংসিত।
নেইমার: মেসি-রোনালদোর প্রতিভায় চাপা পড়েছে অনেক নাম। তাদের মধ্যে নেইমার অন্যতম। বার্সায় থাকলে মেসিকে ছাড়িয়ে তার ব্যালন ডি'অর জেতা হবে না। এমনই চিন্তায় তিনি পিএসজি গেছেন বলে কথা ওঠে। কিন্তু এখনও তিনি সে পথে এগোতে পারেননি। নেইমারের সামনে এখনও সময় আছে। শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যালন ডি'অর জয়ী হবেন। নাকি এমনই এক ব্যালন ডি'অর না পাওয়া আক্ষেপের তালিকায় পড়বেন তা বলার সময় এখনও আসেনি।