ফের আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিসংশন। বিতর্কে সরগরম মার্কিন কংগ্রেস, বিচার বিভাগ আর গণমাধ্যম। বিষয় একটাই, যে কেলেঙ্কারিতে ট্রাম্প জড়িয়েছেন তাতে অভিসংশিত হতে পারেন ট্রাম্প।
শুধু তাই নয়, জেলেও যাওয়া লাগতে পারে তার। কি কেলেঙ্কারিতে জড়ালেন ট্রাম্প? প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তো আছেই।
যেটা নিয়ে তদন্ত করছেন স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলার। নতুন অভিযোগ হচ্ছে, যেসব নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল ট্রাম্পের নির্বাচনের প্রচারণার সময় তাদের মুখ বন্ধ রাখতে ‘ঘুষ’ দিয়েছিলেন তিনি।
দিয়েছিলেন নিজের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের হাত দিয়ে। প্রায় দুই বছর পর আদালতে সব কথা ফাঁস করে দিয়েছেন কোহেন।
রোববার প্রতিনিধি পরিষদের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতারা বলেছেন, ঘুষ দেয়ার মামলাটি যদি আদালতে প্রমাণ হয় তাহলে ট্রাম্পের অভিসংশনের ক্ষেত্রে এটাই যথেষ্ট হবে। সেক্ষেত্রে তিনিই হবেন অভিসংশিত ও জেলে যাওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট। সোমবার শিকাগো ট্রিবিউন ও সিএনএন এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিনের মধ্যে নির্বাচনে রুশ সংযোগ প্রশ্নে ট্রাম্পের অভিসংশনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিন্তু রুশ সংযোগ তদন্তাধীন থাকায় এতদিন কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। এবার শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে মনে করছেন বিরোধী ডেমোক্রেটিকরা। তাছাড়া ৬ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিনিধি পরিষদে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে ডেমোক্র্যাটরা। এখন অভিসংশন প্রক্রিয়া শুরু করা আরও সহজ হয়ে গেছে। জানুয়ারিতে প্রতিনিধি পরিষদের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার আগেই অভিসংশনের বড় কারণ খুঁজে পেলেন ডেমোক্র্যাটরা। অন্তত দু’জন ডেমোক্র্যাট রোববার ট্রাম্পের অভিসংশন সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন। সিএনএনের সঙ্গে আলাপকালে নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য জেরল্ড ন্যাডলার বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা নারীদের মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এটা প্রমাণিত হলে এটা অভিসংশনযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ‘দ্য হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি’র হবু চেয়ারম্যান ন্যাডলার বলেন, যদিও কাজগুলো তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে করেছেন। কিন্তু তিনি এগুলো করেছেন জালিয়াতি করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার উদ্দেশ্যেই। এরই মধ্যে তার সাবেক আইনজীবী কোহেনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। শুক্রবার নিউইয়র্কের আইনজীবীরা কোহেনের শাস্তির বিষয়ে একমত হয়েছেন। আগামী বুধবার এ সাজা ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনী প্রচারণার আর্থিক আইন, কর ফাঁকি ও কংগ্রেসকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার কারণে তার কারাদণ্ড পাওয়া উচিত বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
প্রতিনিধি পরিষদের অপর এক সদস্য অ্যাডাম সিফ বলেন, ট্রাম্পের ওপর এই মুহূর্তে রাশিয়ার সংযোগের তদন্তের বড় চাপ রয়েছে। অন্যান্য কেলেঙ্কারির সঙ্গে নারীদের মুখ বন্ধ করতে অর্থ দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার অভিসংশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অভিসংশিত হয়ে দায়িত্ব ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচার বিভাগ তার বিরুদ্ধে আটকাদেশ দেবেন। এর মানে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্দিষ্ট একটা সময় জেলও খাটতে হতে পারে তার।
দায়িত্ব নেয়ার দু’মাসের মাথায় ২০১৭ সালের মার্চে মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে এফবিআই। এ নিয়ে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বারবার তার আইন কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন। হঠাৎ বরখাস্ত করেন সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কমিকে।
এরপর ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা শিবির ও মস্কোর মধ্যে সম্ভাব্য যোগাযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার। আইন মন্ত্রণালয়ের তদারকিতে বিস্তৃত এই তদন্তের কারণে ট্রাম্পের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। একে একে প্রাপ্ত সব তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করছেন মুলার।
মুলারের বরাত দিয়ে সোমবার ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ট্রাম্পের ১৮ মাসের প্রচারণা এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সময়েও তার অন্তত ১৪ সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রুশ কর্মকর্তারা।