আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, তাদের কেউ যেন ক্ষমতাকে সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে না দেখেন।
তিনি তাদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তাদের জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে, জনগণের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি সংসদ সদস্যদের স্মরণ করে দিয়েছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, তাই ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী যথার্থই একজন জননেত্রীর মতো উচ্চারণ করেছেন কথাগুলো। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, ক্ষমতার অপব্যবহার এক সাধারণ ঘটনা এদেশে। সংসদ সদস্যরা ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার করেছেন কিংবা সম্পদ অর্জনের কাজে লাগিয়েছেন এমন অসংখ্য উদাহরণ তুলে ধরা যায়।
এদেশে সৎ, নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিকের সংখ্যা অতি অল্প বললেও অত্যুক্তি হবে না। প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত এই উপলব্ধি থেকেই বলেছেন কথাগুলো। মহাজোট সরকার গত ১০ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করে আসছে। এই দীর্ঘ সময়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যে দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে, তা হল সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতি।
এ দুই অপবাদের পেছনে সংসদ সদস্যদের ভূমিকাও রয়েছে নিশ্চয়ই। অতঃপর নতুন যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তার দায়িত্ব হবে এ দুই অপবাদ ঘোচানো। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনুধাবন করতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে শত-সহস্র দিক সামাল দেয়া সম্ভব নয়। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তাদের প্রত্যেকের রয়েছে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য। তারা শপথও নিয়েছেন সেভাবে।
তারা উচ্চারণ করেছেন- ‘সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; এবং সংসদ সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দেব না।’ নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এই শপথবাণীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন, সেটাই দেখতে চায় দেশবাসী।
মহাজোট সরকার গত ১০ বছরে দেশের প্রভূত উন্নতি করেছে। বস্তুত এবারের নির্বাচনে তাদের বিজয়ের পেছনে এই উন্নয়নেরও রয়েছে বড় ভূমিকা। সরকারের এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি। উন্নয়ন প্রক্রিয়া জোরদার করার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সংসদে বসে তারা যদি দেশের বাস্তব অবস্থার অনুপঙ্খ বিশ্লেষণ করে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিতে এবং সে অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করতে পারেন, তাহলে দেশ যে আরও এগিয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে যা বলেছেন, তা দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই উচ্চারিত কথামালা। বস্তুত, সংসদ সদস্যরা যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাই তাদেরকে নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিচ্ছবিই বলা যায়।
ভোটাররা প্রকৃতপক্ষে সংসদ সদস্যদের সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে দেখতে চান। তারা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আইন প্রণয়ন করার পাশাপাশি স্ব স্ব এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখবেন- জনগণের এই প্রত্যাশা পূরণ করার মাধ্যমে তারা প্রধানমন্ত্রীর উপদেশবাণীর যথার্থ মূল্যায়ন করলেই জাতির মঙ্গল নিশ্চিত হবে, অন্যথায় নয়।