নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে অবাধ স্বাধীনতা দেয়ায় গত বছর বিশ্বজুড়ে প্রশংসায় ভাসে সৌদি আরব। কিন্তু দেশটিতে নারীদের ওপর এখনও অনেক বিধি-নিষেধ জারি আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক অভিভাবক ব্যবস্থা।
এ ব্যবস্থায় একজন নারীকে তার পরিবারের বাবা, ভাই, স্বামী অথবা ছেলের অধীনে থাকতে হয়। নারীদের হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন পুরষরা।
অন্যথায় কারাভোগ করতে হয়। সৌদি তরুণী রাহাফ আল-কুনুন ঘর ছেড়ে ব্যাংককে পালিয়ে একটি হোটেলে আশ্রয় নেয়ার পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। ওই তরুণী জানায়, তাকে সৌদি আরবে ফেরত পাঠালে বাবার হাতে খুন হতে পারেন তিনি।
পাসপোর্টের জন্য আবেদন, দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া, সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা, বিয়ে করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সৌদি নারীকে পরিবারের পুরুষ সদস্যের অনুমতি নিতে হয়।
মিসরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক মোনা এলতাহায়ি বলেন, এটা এমন একটি বিষয়, যা প্রত্যেক নারীকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভোগায়। নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণে জাতিসংঘের এক নীতিমালায় ২০০০ সালে স্বাক্ষর করে সৌদি। এরপর ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী লিঙ্গসমতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করে সৌদি।
রক্ষণশীল সৌদি আরব নারীদের খেলাধুলার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে। পাশাপাশি স্টেডিয়ামে বসে নারীদের ফুটবল ম্যাচ দেখার অনুমতি দিয়েছে। তবে সৌদি আরবের পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থাকে সমাজ এবং অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কোরআন অনুসারে সৌদি আরবে এই ধর্মীয় বিধান চালু আছে বলে ব্যাখ্যা রয়েছে।
২০১৬ সালে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সৌদি আরবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষভাবে অভিভাবকত্বের প্রয়োজনীয়তার শর্ত রয়েছে। এই শর্তের বিরোধিতা করায় দেশটির বেশকিছু নারী আটক এবং বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।
২০০৮ সালে প্রখ্যাত নারী মানবাধিকার কর্মী সামার বাদায়ি তার বাবার বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাড়ি ছাড়েন। বাবার অভিভাবকত্ব বাতিল করতে আদালতে মামলা করেন তিনি। তার বাবাও মেয়ের বিরুদ্ধে অবাধ্য হওয়ার অভিযোগ এনে পাল্টা মামলা করেন। ২০১০ সালে দেশটির একটি আদালত তাকে আটকে রাখার নির্দেশ দেন। এ মামলার ঘটনায় মানবাধিকার কর্মীদের মাঝে আলোড়ন পড়ার আগেই ৭ মাস কারাগারে কেটে যায় তার। পরে আদালত মামলা বাতিল করে দেন।
২০১৭ সালে মরিয়ম আল-ওতাইবি নামের আরেক নারী মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। বাবার অবাধ্য হওয়ার অভিযোগে তাকে তিন মাস কারাগারেও কাটাতে হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক অভিভাবকত্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই আন্দোলনে অংশ নেয়ায় পরিবারে ভাই ও বাবার নির্যাতনের হুমকির মুখে তিনিও বাসা থেকে পালিয়ে যান। এমনকি যেসব নারী দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন, তারাও কোনো না কোনো সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন।