logo
আপডেট : 22 January, 2019 12:21
চলে গেলেন কিংবদন্তি সংগীত ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
ঢাকা অফিস

চলে গেলেন কিংবদন্তি সংগীত ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)।

মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর বাড্ডায় নিজ বাসায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছেলে সামীর আহমেদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃতদেহ আফতাব নগরে নিজ বাসায় রাখা হয়েছে। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিয়ে আসা হবে শহীদ মিনারে।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা এটিই নিশ্চিত হয়েছেন। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান।

রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (প্রাক্তন আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ চক্রবর্তী এই্ তথ্য জানিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন কিংবদন্তি সংগীত ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। গত বছরের মাঝামাঝি বুলবুলের হার্টে আটটি ব্লক ধরা পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রথিতযশা এই শিল্পীর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পেরে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর বুলবুলকে ভর্তি করা হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে বাইপাস সার্জারি না করে রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন।

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. অধ্যাপক আফজালুর রহমানের অধীনে বুলবুলকে ভর্তি করা হয়েছিল। ডা. আফজাল আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হার্টে দুটি স্টেন্ট (রিং) স্থাপন করেন। রিং পরানো শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন বুলবুল।

এরপর থেকে তিনি বাসাতেই বেশি সময় কাটাতেন। গানে আর তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। তার জীবনযাপনেও বেশ পরিবর্তন আসে। পরিবার পরিজন ও ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আড্ডা আর গল্পেই সময় কাটতো তার। হার্টের অসুখই কাল হল বুলবুলের। রিং পড়ানোর পর জীবনযাপন বদলালেও বাঁচতে পারেননি বুলবুল। আজ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর নিজ বাসায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তিনি।

জনপ্রিয় এ শিল্পীর ব্যক্তিগত সহকারী রোজেন জানান, ভোর ৪টার দিকে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মুঠোফোন থেকে তাকে ফোন করেন। বলেন, তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে, তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

তিনি বলেন, এর পর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আমি স্যারের বাসায় যাই। কিন্তু গিয়ে তার কোনো পালস পাইনি। পরে তাকে দ্রুত রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে সাড়ে ৫টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭৮ সালে 'মেঘ বিজলী বাদল' ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন।

সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনকচাঁপাসহ বাংলাদেশি প্রায় সব জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর গাওয়া বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। ১৯৭৬ সাল থেকে তার নিয়মিত গান করা। প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

এই জনপ্রিয় শিল্পীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায়। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বুলবুল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাইফেল হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন ও সুর করেছেন।

‘এই দেশ আমার সুন্দরী রাজকন্যা’, ‘আয় রে মা আয় রে’, ‘উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে, ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’-এমন বহু কালজয়ী গানের স্রষ্টা এ শিল্পী।

তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পাঙ্গনে। শোকে স্তব্ধ গানের জগতের লোকজন। ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার ছেলে সামির আহমেদ।

বুলবুল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।