logo
আপডেট : 22 February, 2019 02:45
যে গাড়ি থেকে চকবাজার মৃত্যুপুরী
ঢাকা অফিস

যে গাড়ি থেকে চকবাজার মৃত্যুপুরী

এই প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত বলে বলা হচ্ছে

আগুন কতটা ভয়ঙ্কর তার প্রমাণ পুরান ঢাকার চকবাজারের ঘটনা। আগুনের দাবানল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভয়াল এ আগুনে নারী-শিশুসহ ৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়েই দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এ ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত। পুড়ে যাওয়া গাড়িটি চুড়িহাট্টা মোড়েই রাখা হয়েছে। গাড়িটির সামনের ও পেছনের কোনো অংশই অক্ষত নেই। পুরোটাই পুড়ে বাদামি রং ধারণ করেছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, মূল ঘটনাটি অবশ্যই মর্মান্তিক। তবে এর কারণ আমরা জানি- প্রথম কারণটি একটি প্রাইভেটকারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে যে আগুন লেগেছিল আরেকটি পিকআপভ্যানে। যেখানে প্রায় ৮-১০টা সিলিন্ডার পরিবহন করছিল। ওই সিলিন্ডারগুলো একযোগে বিস্ফোরিত হয়ে পাশে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার ছিল এবং এসির কম্প্রেসারের ইউনিট ছিল সেখানে লেগে আগুন লেগে যায় ইলেকট্রিক তারে।

তিনি বলেন, পাশে একটি হোটেল ছিল। এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে হোটেলটিতেও। সেখানে ৪টি বড় সিলিন্ডার ছিল রান্নার। সেগুলোতেও আগুন লেগে যায়। এর ফলে ভয়াবহভাবে পুরো এলাকায় আগুন ছড়িয়ে যায়। পথচারী যারা ছিল, রিকশাযাত্রী, কারে যারা ছিল রাস্তায় তারা নিজেকে বাঁচাতে পেড়েছেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই আগুন গিয়ে লেগেছে বড় ৬ তলাবিশিষ্ট একটি ভবনে এবং এর আশপাশের ভবনে। সেটিও হয়তো খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যেত। ওই ভবনটির নিচতলায় ছিল প্লাস্টিকের দানা, তিনতলায় ছিল বডি স্প্রের গোডাউন। আমার মনে হয়, মিলিয়নস মিলিয়নস বডি স্প্রে ওখানে মজুদ ছিল।

তিনি বলেন, আগুন যখন লাগে আমি রাতে ওখানে ছিলাম। ফায়ার ব্রিগেডের ডিজি ছিলেন, লালবাগের ডিসি সাহেবসহ আমাদের গোয়েন্দার অ্যাডিশনাল কমিশনার ও স্থানীয় এমপি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা দেখেছি যে- প্রতি সেকেন্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণের আওয়াজের মতো আগুন উঠছে এবং বিস্ফোরণ হচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের তখন একটিই চ্যালেঞ্জ ছিল ফায়ার ব্রিগেডের কাছে আমাদের কাছে যে আশপাশের বিল্ডিংগুলো আমরা কীভাবে সেফ করব। আর যেভাবে বিস্ফোরণ হচ্ছে, এতে ওই ভবনটি যদি ধসে পড়ে তাহলে আশপাশের অন্য বিল্ডিংয়ের লোক মারা যাবে। যদিও আমরা অন্যান্য বিল্ডিংয়ের লোকদের নামিয়ে এনেছিলাম। যারা মারা গেছেন তারা পথচারী। আর যারা ওই বিল্ডিংয়ের চারতলা-পাঁচতলায় ছিলেস তাদের মধ্যে কেউ নামতে গিয়ে মরেছে আবার কেউ আগুনের স্ফুলিঙ্গ গায়ে লেগে মারা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমদ খান বলেন, যতটুকু আমরা শুনেছি- একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর ভবনের একটি অংশে আগুন লাগে। পাশে একটি খাবারের হোটেল ছিল, সেখানে রান্নার কাজে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হতো। এ ছাড়া পাশে একটি ভবনের দোতলায় কেমিক্যালের মজুদ ছিল। ছিল প্লাস্টিকের দানা ও বডি স্প্রে। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবনে বুধবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ করে বুধবার রাত সোয়া ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। উদ্ধার অভিযান চলে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এ ঘটনায় অন্তত ৬৯ জন নিহত হন।