পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের বিমান হামলার ঘটনায় ইসলামাবাদের প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থনে’র আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস।
বুধবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি।
এদিকে মঙ্গলবারের বিমান হামলায় ভারতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে ওই হামলার পাল্টা হামলা না চালাতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। পাক-ভারত সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বর্তমানে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার অন্যতম অংশীদার তালেবান গোষ্ঠী।
গোষ্ঠীটি বলেছে, প্রতিবেশী দেশ দুটির নতুন এ সংঘাত আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোয় ভারতের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি। সেই সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে জড়ানোর ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে এসব খবর দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের ৮০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে অন্তত তিনটি অবস্থানে হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী।
এ হামলাকে ‘ভারতের আগ্রাসন’ হিসেবে অভিহিত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে অবহিত করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ইসলামাবাদ। এরই অংশ হিসেবে বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি।
ফোনালাপ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে কুরেশী বলেন, ‘আগে থেকেই উদ্বেগ ছিল, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে ভারত।
আমাদের সেই উদ্বেগই সত্য হয়েছে। ভারত পাকিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছে।’
কুরেশি বলেন, ‘ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন আগ্রাসী কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। কুরেশি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনায় পাকিস্তানের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।’
এ সময় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানাতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বসে নেই ভারতও। সমানে কূটনৈতিক তদবির চালিয়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মঙ্গলবারই বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
ভারতীয় সরকারি সূত্রগুলোর ভাষ্য, ফোনালাপে সুষমা স্বরাজ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে জানিয়েছেন, কেন ভারতকে এই হামলা চালাতে হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভিয়েতনামের হ্যানয় থেকে সুষমার সঙ্গে কথা বলেন পম্পেও। ‘
সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে’ ভারতের পাশেই থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এছাড়া বুধবার পৃথক এক বিবৃতিতে বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনায় দুই দেশকেই যে কোনো মূল্যে উত্তেজনা এড়িয়ে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান পম্পেও।
বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরও তিনি জইশ ই মোহাম্মদের ঘাঁটিতে হামলা চালানোর বিষয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেন। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও কিছু জানায়নি।
এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ছাড়াও ভারতের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মতো প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রটি দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছে, সুষমা স্বরাজ ভারতের বিরোধী দলের নেতাদেরও হামলার বিষয়ে অবহিত করেছেন।