ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ১৮টি হলের ফলাফল পাওয়া গেছে। সোমবার ডাকসু নির্বাচন শেষে হলগুলোর নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা হল সংসদ রিটার্নিং অফিসাররা এই ফল ঘোষণা করেন।
শামসুন্নাহার হলের ফল পাল্টে দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখানে ভিপি, জিএস এজিএসসহ ১৩টি পদের ৮টিতেই স্বতন্ত্র প্যানেল জয়ী হয়েছে। বাকিগুলোতে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। হলটিতে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি, জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন আফসানা ছপা, এজিএস ফাতিমা আক্তার। জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্যানেলটি ৮ জনেরই ছিল। এরা সবাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্যানেলের শিক্ষার্থী।
অমর একুশে হলে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান সুমন। এই হলে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের প্যানেলের আহসান হাবীব।
ফলে চমক এসেছে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলেও। এতে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী রিকি হায়দার আশা। তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী কোহিনুর আক্তার রাখিকে পরাজিত করেন। এই হলে সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্রলীগের সারা বিনতে জামাল জয়ী হন। এই হলে ১০ পদে ছাত্রলীগ জয়ী হলেও রিকির মতো সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে তাসলিন হালিম মিম ও সাহিত্য সম্পাদক পদে খাদিজা জয়ী হন। এই দুজনও সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।
কবি সুফিয়া কামাল হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দেওয়া প্যানেলের সব প্রার্থী জয়ী হয়েছে। এই হলে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন তানজিনা আক্তার সুমা ও জিএস নির্বাচিত হয়েছেন মুনিরা শারমিন।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত। তিনি পেয়েছেন ১২৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোলায়মান ইসলাম পেয়েছেন ১২৬ ভোট। এই হলে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তৌফিকুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৮৩৬ ভোট। তার নিকটতম রিফাত উদ্দিন পেয়েছেন ৬৮০ ভোট।
জসিম উদ দীন হল ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেলের ফরহাদ আলী। এই হলে জিএস নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের ইমাম হাসান।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগ সমর্থিত প্রার্থী শহিদুল হক শিশির। তিনি পেয়েছেন ৭৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাকিল মিয়া পেয়েছেন ২১৭ ভোট। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের মেহেদী হাসান মিজান। তিনি পেয়েছেন ৬২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিজান রহমান পান ২৫১ ভোট।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদে ভিপি পদে ছাত্রলীগের আকমল হোসেন ও জিএস পদে মেহেদি হাসান শান্ত নির্বাচিত হয়েছেন। আকমল হোসেন পেয়েছেন ৯৭৯ ভোট ও জিএস পদে মেহেদী হাসান শান্ত পেয়েছেন ৯৯৫ ভোট। এই হলের ১১টি ছাত্রলীগ জয়ী হলেও দুটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এরা হচ্ছেন সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ইয়াসির আরাফাত ও সদস্য পদে আতাউল্লাহ আরমান।
জিয়াউর রহমান হলে পূর্ণ প্যানেলে জিতেছে ছাত্রলীগ। এখানে ছাত্রলীগ থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন শরিফুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৮২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তারেক হাসান পেয়েছেন ১৬৯ ভোট। এই প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। তিনি পেয়েছেন ৬৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রায়হানুল ইসলাম পেয়েছেন ৩৪৪ ভোট।
বিজয় একাত্তর হলে ১৩টি পদের সব কটিতেই জয়ী হয়েছে ছাত্রলীগ প্রার্থীরা। এই হলে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন সজিবুর রহমান এবং জিএস পদে জয়ী হয়েছেন নাজমুল হাসান নিশান।
সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হলেও পূর্ণ প্যানেলে জয়ী ছাত্রলীগ। এই হলে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন মোজাহীদ কামাল উদ্দীন (এম এম কামাল)। জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন জুলিয়াস সিজার ও এজিএস পদে জিতেছেন নওশের।
জগন্নাথ হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে ছাত্রলীগ জয়ী হয়েছে। এই হলে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগ উৎপল বিশ্বাস। জিএস পদে জয়ী হয়েছেন কাজল দাস।
সূর্যসেন হলে ভিপি পদে জিতেছেন ছাত্রলীগের মারিয়াম জামান খান সোহান। জিএস পদে জিতেছেন একই প্যানেলের সিয়াম রহমান। প্যানেলের বাইরে বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে জুলহাস সুজন, সাহিত্য আল সাদী।
এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল জয়ী হয়েছে। এই হলে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল আলীম খান ও জিএস পদে জয়ী হয়েছেন আব্দুর রহীম।
শহীদুল্লাহ হলে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন হোসাইন আহমদ সোহান। জিএস পদে জয়ী হয়েছেন ইরফানুল হাই সৌরভ। এই হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে জয়ী হয়েছে ছাত্রলীগ।
ফজলুল হক হলে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদুল হাসান তমাল। জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন মাহফুজুর রহমান।
রোকেয়া হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এই হলে সহ-সভাপতি (ভিপি) হয়েছেন ইশরাত জাহান তন্বী ও সাধারণ সম্পাদক হন সায়মা আক্তার প্রমী। এরআগে, সকালে ব্যালট বাক্স গোপন করার অভিযোগে ভোট গ্রহণ শুরুর পর এক পর্যায়ে বন্ধ থাকে। বিকেল তিনটায় যখন পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয় তখন ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য প্রার্থীরা ভোট বর্জন করে।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের হল সংসদ নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সুস্মিতা কুণ্ডু। তবে এই হল সংসদে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাগুপ্তা বুশরা। স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে জয়ী হয়েছেন আরও তিন জন। নির্বাচনে সাতটি পদে প্রার্থিতা রেখে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে জয় পেয়েছেন চার জন। তারা হলেন জিএস, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মুন্নী আক্তার, সাহিত্য সম্পাদক সাহরীন সুলতানা ইরা ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক জয়নব আক্তার।