নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট হাউসে আগামী ২৭ মার্চ বুধবার ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপন করা হবে। অস্টম বারের মতো নিউইয়র্ক স্টেটের রাজধানী আলবেনীতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে “বাংলাদেশ ডে” হিসেবে।
বাংলাদেশের ৪৮ তম স্বাধীনতা দিবসের এদিনে আলবেনীর ক্যাপিটাল হিলে আবারো উড়বে বাংলাদেশের পতাকা।
নিউইয়র্কে ব্রঙ্কসের একটি রেস্টুরেন্টে গত ২০ মার্চ বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডে উদযাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে এ লক্ষে গঠিত আহ্বায়ক কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কনভেনার মাহবুব আলম, প্রধান সমন্বয়কারী আবদুস শহীদ, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এন মজুমদার, বর্তমান কো-কনভেনার ফরিদা ইয়াসমিন, মেম্বার সেক্রেটারী নজরুল হক, সদস্য শাহেদ আহমদ, এ ইসলাম মামুন, কফিল চৌধুরী, পল্লব সরকার, আলাউদ্দিন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরর উত্তর দেন নের্তৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, অন্যান্যবারের মতো এবারও নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট এবং এসেম্বলিতে বাংলাদেশ ডে উদযাপনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্ণ মর্যাদায় স্টেটের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানমালা থাকবে। স্টেট সিনেট হাউজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আলবেনী হলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্মানে এক অভ্যর্থনা পার্টির আয়োজন করা হবে। এসময় বিভিন্ন জনকে সম্মাননা প্রদান ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, এদিন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে বাংলাদেশের ৪৮ তম স্বাধীনতা দিবসের ওপর রেজুলেশন গ্রহণ করা হবে। স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা সিনেট হাউজে তা উত্থাপন করবেন। সিনেট অধিবেশনের রেজুলেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হবে।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে সিনেটে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এসময় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। সিনেট গ্যালারি এদিন পুরোটাই সংরক্ষিত থাকবে বাংলাদেশীদের জন্য।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান হয়, বাংলাদেশ ডে কোন ব্যক্তি বা দলের অনুষ্ঠান নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশী-আমেরিকানদের সম্মানার্থে স্টেটের পক্ষ থেকে এক বিশেষ আয়োজন। দলমত নির্বিশেষে প্রবাসীরা বাংলাদেশ ডে’র নানা কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করবেন। মুলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য এই আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে নিউইয়র্ক স্টেটের বিভিন্ন রাজনীতিকদের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলছি, যা উদিয়মান বাংলাদেশী কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য সহায়ক।
এদিকে, এর আগে ব্যাপক আয়োজনে দিবসটি উদযাপনের জন্য সম্মিলিত বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ২০১৯ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সিনেটর লুইস আর সেপুলভেদাকে চেয়ারপার্সন, মাহবুব আলমকে কনভেনার, আবদুস শহীদকে প্রধান সমন্বয়কারী, ফরিদা ইয়াসমিন ও রেক্সোনা মজুমদারকে কো-কনভেনার, নজরুল হককে মেম্বার সেক্রেটারী এবং মঞ্জুর চৌধুরী জগলুলকে কোষাধ্যক্ষ করে ৩১ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন : মোহাম্মদ এন মজুমদার, সোলায়মান আলী, আবদুল হাসিম হাসনু, আবদুর রহিম বাদশা, শাহেদ আহমদ, এ ইসলাম মামুন, কফিল চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম খান, রিয়াজ কামরান, সায়দুর রহমান লিংকন, সাখাওয়াত আলী, মো. শামীম মিয়া, রফিকুল ইসলাম, নূর উদ্দিন, আহবাব চৌধুরী খোকন, বুরহান উদ্দিন, শামীম আহমেদ, ফাহমিদা চৌধুলী, শামিমারা বেগম, কামাল উদ্দিন, শ্যামল কান্তি চন্দ, মো. আলাউদ্দিন এবং পল্লব সরকার।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ঐতিহাসিক বাংলাদেশ ডে বিলটি পাশ হয় ২০১২ সালের ২৪ মার্চ। ব্রঙ্কস থেকে নির্বাচিত সাবেক সিনেটর বর্তমান কাউন্সিলম্যান রুবিন ডিয়াজের ধন্যবাদ প্রস্তাব বিলের মাধ্যমে বিলটি পাশ হয়। তাকে রেজুলেশন তৈরি করে সহযোগীতা করেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে ‘লুইস ভাই’ হিসেবে পরিচিত এটর্নী লুইস সিপুলভেদা (বর্তমান সিনেটর)। তাদের সহযোগীতা করেন ব্রঙ্কস বাংলাদেশী কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দ।
জানা যায়, রুবিন ডিয়াজ ও লুইস সিপুলভেদা বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে ও একসাথে কাজ করার বিষয়ে প্রয়াত কমিউনিটি সংগঠক জাকির খানের কাছে আগ্রহ ব্যাক্ত করেন। বাংলাদেশ কমিউনিটিকে নিয়ে এমন একটি অনুষ্ঠান করতে চান যার ফান্ডিং তারা বহন করবেন। জাকির খান তাদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটাতে কমিউনিটির অনেকের সাথে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে লুইস সিপুলভেদা এবং জাকির খানের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের সভাপতি মোহাম্মদ এন মজুমদারের সভাপতিত্বে বাংলাদেশের ৪১ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বিষয়ে এক সভার আয়োজন করা হয় ব্রঙ্কসের একটি রেষ্টুরেন্টে। ওই সভায় মাহবুব আলমের প্রস্তাবনায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে ২০১২ সালের ২৪ মার্চ নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ততকালীন সিনেটর রুবিন ডিয়াজ বাংলাদেশ ডে বিলটি উত্থাপন করেন। বিলের আলোকে সিনেটর রুবিন ডিয়াজ সিনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বাংলাদেশীদের আত্মত্যাগ এবং পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী মা-বোনদের সম্ভ্রমহানির কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন। সেদিন মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই এই ঐতিহাসিক বিলটি সর্বসম্মতভাবে সিনেটে পাশ হয়। সেথেকে প্রতি বছর দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ডে রেজ্যুলেশন প্রস্তুতকারী এটর্নী লুইস সিপুলভেদা (বর্তমান সিনেটর) এসেম্বলিম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আলবেনীতে বাংলাদেশ ডে উদযাপনে আরো ব্যাপকতা পায়। ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপনের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ এন মজুমদার এবং মেম্বার সেক্রেটারী ছিলেন মরহুম জাকির খান।