মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক গোলান মালভূমি ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব।
এ বিষয়ে ঘোষণাপত্রে ট্রাম্পের স্বাক্ষরেরও কঠোর নিন্দা জানায় দেশটি।
সৌদি সরকারের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্ব মেনে নেয়ার যে উদ্যোগ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিয়েছেন, তা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বশান্তির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। গোলান মালভূমি একটি আরব ভূখণ্ড। এবং তা আরবের অংশ হিসেবেই থাকবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়।
গোলান মালভূমি বিষয়ে সৌদি সরকারের অবস্থান জানিয়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গোলানের পাহাড়ি অঞ্চলটি সিরিয়ার একটি আরব ভূখণ্ড।
যা ইসরাইল অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। দখলের মাধ্যমে অবৈধ জিনিস কখনো বৈধ হয় না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার মাধমে বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই ভবিষ্যতেও এ অঞ্চল আরবের অংশ হিসেবেই থাকবে।
ট্রাম্পের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরের বিষয়টি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লংঘন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিয়ে অশান্তির আশঙ্কা দূর করবেন বলেও আশা করা হয় ওই বিবৃতিতে।
পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ ও স্পষ্ট এমন বিষয়ে সকল দেশকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ারও আহ্বান জানায় সৌদি আরব।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তেলআবিব সিরিয়ার কাছ থেকে কৌশলগত এ এলাকাটি দখল করে নেয়। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনই এর স্বীকৃতি দেয়নি। দশকের পর দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের দেশগুলো ইসরাইলের এ দখলদারিত্বকে প্রত্যাখ্যান করে আসছিল।
কিন্তু ট্রাম্প এবার গোটা বিশ্বকে উপেক্ষা করে দখলকৃত ওই ভূখণ্ডের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
সোমবার ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে গোলান মালভূমি ইসরাইলের ভূখণ্ড এ ঘোষণাপত্রে সই করেন ট্রাম্প।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল এ জায়গাটি সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন- যুক্তরাষ্ট্র জেনেছে গোলান ইসরাইলের সার্বভৌম। আর এ কারণেই গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ৫২ বছর পর গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বে স্বীকৃতি দেয়ার সময় এটিই।
মালভূমিতে বর্তমানে ২০ হাজার অবৈধ দখলদার বসবাস করছেন। কাজেই এ দখলদারিত্ব কখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দিতে পারে না। এদিকে ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনা ও নিন্দা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ রয়েছে।
১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। সেই সময় ইহুদিবাদী বাহিনী ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকারও নিয়ন্ত্রণ নেয়।
পরে ১৯৮১ সালে গোলান মালভূমিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল কখনই ইসরাইলের এই দাবির স্বীকৃতি দেয়নি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গোলান মালভূমির মালিকানা সংক্রান্ত এক ভোটাভুটি হয়।
সেখানে উপস্থিত ১৫৩ দেশের মধ্যে ১৫১ দেশ এ ভূখণ্ডের মালিকানা সিরিয়ার বলে স্বীকৃতি দেয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
তা সত্ত্বেও গোলানবাসীর ওপর ৫২ বছর ধরে ইহুদিবাদী দখলদারিত্ব আর অত্যাচার একটুও কমেনি; বরং বেড়েই চলছে।