যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, তিনি চান আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আবারও চাঁদে নভোচারী পাঠাবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা।
সম্প্রতি চাঁদের উল্টো-পিঠে চীনের চালানো রোবোটিক মিশনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আবার একটা মহাকাশ-কেন্দ্রীক প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছি, ঠিক যেমনটি ছিলাম ১৯৬০-এর দশকে।’
চাঁদে পুনরায় মানুষ পাঠানোর ব্যাপারে আগে থেকেই পরিকল্পনা রয়েছে নাসা'র। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, পেন্স-এর ঘোষণার পর এই সময়সীমাকে আরও বেগবান করবে নাসা।
অ্যালাব্যামার হান্টসভিলের ন্যাশনাল স্পেস কাউন্সিলের সভায় দেয়া এক বক্তৃতায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আগামী ৫ বছরের মধ্যে চাঁদে আবারো মার্কিন নভোচারী পাঠানোর বিষয়টি বর্তমান প্রশাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতির মধ্যেই রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ শতকে প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদে পৌঁছাতে পেরেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তেমনই একুশ শতকে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর ক্ষেত্রেও আমরাই হবো প্রথম জাতি।’
নাসা এবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে লক্ষ্যবস্তু করবে, যেটি স্থায়ী অন্ধকারাচ্ছন্ন চ্যালেঞ্জিং একটি অংশ।
কিন্তু ওই অংশটি জমাট পানি বা বরফের একটি আধার, যাকে মহাকাশযানের জন্যে জ্বালানিতে রূপান্তর করতে চায় নাসা ।
১৯৬৯ সালে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করা প্রথম মানব নীল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, ‘এটা মানুষের জন্য ক্ষুদ্র পদক্ষেপ কিন্তু মানবজাতির জন্য বিশাল এক যাত্রা।’
চাঁদের বুকে হেঁটে যাওয়া প্রথম মানুষ নীল আর্মস্ট্রং-এর সেই কথার পুনরাবৃত্তি করে পেন্স বলেন, ‘পরবর্তী বিশাল পদক্ষেপের এখন এটাই সময়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মার্কিন মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানোই হবে এই পরবর্তী দীর্ঘ যাত্রা এবং সেখানে মার্কিন নভোচারীদের স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠার পর তাদের প্রস্তুতি হবে পরের গন্তব্য, মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা।"
এর জবাবে ইউএস স্পেস এজেন্সির পরিচালক জিম ব্রাইডেনস্টাইন টুইট করে জানিয়েছেন,‘চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হল। এখন কাজ শুরুর পালা।’
২০২৪ সালের মধ্যে গেটওয়ে নামে একটি স্পেস স্টেশন বানানো হবে চাঁদের কক্ষপথের কাছে। এরপর ২০২৪ সাল নাগাদ চাঁদে নভোচারী পাঠানো হবে। এমনটাই ছিল নাসার পরিকল্পনা।
কেউ কেউ মনে করছেন যে, এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং।
এই চন্দ্র অভিযানের পরিকল্পনার জন্যে দরকার একটি বিশাল ভারবহনে সক্ষম রকেট, যা চাঁদের গমন এবং অবতরণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও রসদ নিয়ে যাবে।
নাসা এজন্যে নিজস্ব একটি লঞ্চার নির্মাণ করেছে, যা স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) নামে পরিচিত। কিন্তু প্রকল্পটির বিলম্ব ঘটছে এবং খরচ বেড়ে চলছে।
ব্রাইডেনস্টাইন প্রকল্প এগিয়ে নেবার জন্যে একটি কম শক্তিশালী বাণিজ্যিক রকেটের কথা ভেবেছিলেন। ২০২০ সালের মধ্যে মনুষ্যবিহীন একটি ক্যাপসুলকে মহাশূন্যে নেবার জন্যে সেটি হতে পারে স্পেস এক্স বা বোয়িং-লকহেড মার্টিন যৌথ অংশীদার ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স দ্বারা নির্মিত রকেট।
কিন্তু মঙ্গলবার ভাইস প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর নাসার পরিচালক বলছেন, তিনি নিশ্চিত ছিলেন আগামী বছরের মধ্যে একটি সফল এসএলএস উৎক্ষেপণ করতে পারবে নাসা। লকহেড মার্টিন নির্মিত অরিয়ন ক্যাপসুল হবে মহাকাশচারীদের চাঁদের কক্ষপথে নিয়ে যাবার প্রধান মহাকাশযান। তবে এগুলো বানানোর কাজই এখনো শুরু হয়নি।
এদিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স কেবল ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি হুমকিও দিয়ে বলেছেন, নাসা যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রস্তুত হতে না পারে, তবে বাণিজ্যিক লঞ্চিং সিস্টেম বা অন্য কোনও সহযোগী সন্ধান করা হবে।