logo
আপডেট : 6 April, 2019 22:22
তুলে দেয়া হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
যে কোনো মুহুর্তে গ্রেফতার হচ্ছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

যে কোনো মুহুর্তে গ্রেফতার হচ্ছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন: যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন দুনিয়া কাঁপানো অনলাইন সংবাদ মাধ্যম “উইকিলিকস” এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। গ্রেফতারের পর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও তুলে দেয়া হতে পারে। আমেরিকার সরকার, সামরিক বাহিনীসহ সারা বিশ্বের লাখ লাখ গোপন নথি এবং তথ্য প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছিল উইকিলিকস। ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর গোপন তথ্য উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দুনিয়াব্যাপী আধিপত্যবাদবিরোধী মানুষদের প্রতীকী কণ্ঠস্বরে পরিণত হন এই অষ্ট্রেলিয় নাগরিক।

লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে ৮ বছর ধরে অবস্থান করছেন তিনি। যে কোনো সময় অ্যাসাঞ্জকে দূতাবাস থেকে বের করে দেয়া হবে ইকুয়েডর দূতাবাসের এমন ঘোষনার পর সেখানে অ্যাসাঞ্জ-সমর্থকদের ভিড় বাড়ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছেন অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা। সেখানে অবস্থান নিয়েছে সশস্ত্র ব্রিটিশ পুলিশ। 

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসাঞ্জকে ধরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঋণ মওকুফ চেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট মোরেনো গত মঙ্গলবার স্থানীয় একটি রেডিওতে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে তাদের দূতাবাসে অবস্থানের সময় বারবার তাকে আশ্রয় দানের শর্ত লঙ্ঘন করেছেন।

ইকুয়েডর দূবাসের সামনে সশস্ত্র পুলিশের অবস্থান বিষয়ে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি পুলিশের নিয়মতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের কোনও ব্যত্যয় হয়নি। এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, জামিনের জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করার অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরেুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে এবং সেকারণে তিনি দূতাবাস ত্যাগ করলে পুলিশ পরোয়ানা জারি করতে বাধ্য হবে।

অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করতে ইকুয়েডরের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একটি চুক্তি হয়েছে বলে শুক্রবার উইকিলিকসের একটি টুইটে বলা হয়। ওই টুইটে বলা হয়, ইকুয়েডরের একজন শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা উইকিলিকসকে বলেছেন, আইএনএ পেপারস অফশোর স্ক্যান্ডালকে কেন্দ্র করে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যে কোনো সময় দূতাবাস থেকে বের করে দেয়া হবে। তবে অ্যাসাঞ্জকে ‘মুক্ত মানুষ’ আখ্য দিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন ইচ্ছা করলেই তিনি দূতাবাস ত্যাগ করতে পারেন। 

ব্রিটিশ আদালত থেকে সাময়িক জামিনে থাকা অবস্থায় একটি কথিত যৌন হয়রানি মামলায় সুইডেনের প্রত্যর্পণের আশঙ্কায় ২০১২ সালের জুন মাসে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। তার পর এই দূতাবাস ভবনের বাইরে আসেননি অ্যাসাঞ্জ। তার আশঙ্কা ইকুয়েডরের কূটনৈতিক এলাকা ত্যাগ করলেই তাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আর হাজার হাজার মার্কিন নথি ফাঁস করে দেওয়ায় সেখানে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শুক্রবার অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা ইকুয়েডর দূতাবাসের বাইরে একটি বিলবোর্ডবাহী ট্রাক মোতায়েন করে। ট্রাকটিতে মার্কিন পতাকা দিয়ে অ্যাসাঞ্জ আর চেলসি ম্যানিংয়ের মুখ বন্ধ করা ছবি রয়েছে। লেখা রয়েছে: ‘বাকস্বাধীনতা...যুদ্ধাপরাদীদের বাদে’। ইকুয়েডর দূতাবাস ভবনের সরাসরি সামনে বিলবোডবাহী ট্রাকটি পার্ক করে রাখা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই লণ্ডনের পুলিশে এসে ট্রাকের চালককে জানান, দূতাবাসের পার্কিং স্পট আটকে রাখার অভিযোগ পেয়েছেন তারা। সেকারণে শুধুমাত্র সেখান থেকে ট্রাকটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন, তার আপত্তি কেবলমাত্র ট্রাকটির অবস্থান নিয়ে। পরে ট্রাকটি সেখান থেকে সরিয়ে নিলেও অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা লিফলেট বিতরণ করে। ওই লিফলেটে উইকিলিকসকে রক্ষায় আইনপ্রণেতার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে। অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা সেখানে একটি ব্যানার তুলে ধরে। তাতে লেখা ছিল, ‘সত্য আপনাকে মুক্তি দেবে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দাও’।   

ব্যক্তিগত নথি ও পারিবারিক ছবি প্রকাশ করায় অ্যাসাঞ্জের ওপর ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো ক্ষিপ্ত থাকলেও দেশটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা উইকিলিকসের দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ওই কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের বিচারের প্রস্তুতি চলছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর লাখ লাখ গোপনীয় নথিসহ অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছিল উইকিলিকস। আমেরিকায় একটি গ্র্যান্ড জুরি অ্যাসাঞ্জকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে চায়, এমন খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে।

অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে চেলসি ম্যানিং নামের সেই সাবেক মার্কিন সেনা কম্পিউটার অ্যানালিস্টকে গ্র্যান্ড জুরির সামনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়, যিনি ইরাক যুদ্ধের গোপনীয় নথিপত্র ও ভিডিও ক্লিপ উইকিলিকসকে দিয়েছিলেন বলে বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদায় নেওয়ার সময় তাঁর দণ্ড মওকুফ করেছিলেন এবং তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড জুরির সামনে সাক্ষ্য দেননি বলে তাঁকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তবে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিলে গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত আইনে অভিযুক্ত করে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে আসছে “উইকিলিকস”।